আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের বিরোধ বেশ কয়েকবছর ধরে। এবার বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জের ধরে তালেবান বেশ কিছু জেলা দখল করে নেয়ার পর তালেবানের বিরুদ্ধে গণ-প্রতিরোধ বাহিনী গঠন করা হচ্ছে। তালেবানের বিরুদ্ধে ফের অস্ত্র তুলে নিয়েছেন কয়েক ডজন আফগান নারী। কেউ হাতে নিয়েছেন মরণঘাতী ভারী অস্ত্র।
অনেক নারী আবার মিছিল করেছেন দেশটির ঘোর প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী ফিরোজকোহে। এরই মধ্যে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা নারীদের অনেকেই হাত মিলেয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি সরকারের সাথে।
এসব নারীদের দাবি তালেবানের শাসনামল অর্থাৎ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিল আফগান নারীদের জন্য অন্ধকার সময়। তালেবানের আমলে নারীদের অধিকার হরণ করা হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবাঞ্চিত ছিল আফগান নারীরা। ধর্মীয় আইনের নামে নারীদের অধিকার ও ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে অভিযোগ অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া নারীদের।
তলেবানের সঙ্গে লাড়াইয়ে প্রস্তুত এমন নারীর সংখ্যা কত তা নিশ্চিত করতে পারেনি আশরাফ ঘানি প্রশাসন। তবে তাদের দাবি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে ভারী অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া নারীদের সংখ্যা।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশে তালেবান জঙ্গিদের হাতে ছেলেকে হারিয়েছিলেন এক মা। এরপর ছেলে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ২০১৪ সালে ওই আফগান নারী অন্তত ২৫ তালেবান জঙ্গিকে হত্যা করেছিল।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঘোর প্রদেশের এক অধিবাসী বলেন, তারা আফগান প্রশাসনের সঙ্গে আছে। অধিকারের জন্য লড়াইরত নারীদের সঙ্গে আছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে তারাও অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্রস্তুত।
নারীরা ছাড়াও আফগানিস্তানের বহু সাধারণ মানুষ এরই মধ্যে তালেবানের বিপক্ষে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। নারীদের মতো তারাও হাত মিলেয়েছে ঘানি প্রশাসনের সঙ্গে।
এদিকে থেমে নেই তালেবান যোদ্ধারাও। আফগানিস্তানে একের পর এক জেলা দখল করে নিচ্ছে তারা। সবশেষ দখলে নিয়েছে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাদাখশান ও কান্দাহার জেলা। বেদখল হওয়ার আগে কান্দাহার অঞ্চলটি তালেবানের পুরাতন দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল।
৩ জুলাই রাতে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের মাধ্যমে শহরটি দখলে নেয় তালেবান। গত ২৪ ঘণ্টায় তালেবান আফগানিস্তানের আরও ৬টি জেলা নিজেদের দখলে নিয়েছে।
সম্প্রতি দখল করা জেলাগুলো হলো বাদাখশান প্রদেশের কোফাব, আরগো, কোহিস্তান, জিবাক, ইয়াওয়ান ও বাহারাক। এছাড়া কান্দাহার প্রদেশের পাঞ্জওয়াই ও পাকটিকায় দখল করেছে জিরোক। তাকহারে দখলে নিয়েছে ওয়ারসাজ জেলা। এনিয়ে আফগানিস্তানের ৩৭২টি জেলার মধ্যে তালেবানের দখলে এলো ১১৬টি জেলা।
আফগানস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে আশরাফ ঘানি সরকারের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। কারণ একের পর এক জেলা দখল করে নিচ্ছে তালেবান। আশরাফ ঘানি হলো মার্কিন সমর্থিত আফগান প্রেসিডেন্ট।
এদিকে জেলাগুলো পুনরুদ্ধারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানদের তীব্র লড়াই চলছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ জনগণের মাঝে। এরই মধ্যে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে নিহত হয়েছে বহু সাধারণ মানুষ। অনেকে চাচ্ছে যে কোনো একপক্ষের বিজয়ের মাধ্যমে এই লড়াইয়ের অবসান হোক।
সাননিউজ/এএসএম