আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনি তরুণী মাইস আবু গুশ। ১৬ মাসের বন্দীদশা থেকে মুক্তির পর ইসরায়েলি কারাগারে বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে, তিনি বলেন, যখন আমাকে হাতকড়া পরিয়ে লম্বা করিডর দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারারক্ষীরা নিয়ে যাচ্ছিল, তখন ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ব্যঙ্গাত্মকভাবে তালি বাজাতে থাকে। তারা উপহাস করে বলছিল জিজ্ঞাসাবাদে তোমাকে মেরে ফেলা হবে।
তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদুলু এজেন্সিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই বর্বরতার বর্ণনা দিয়েছেন মাইস। মাইসকে জিজ্ঞাসাবাদে তার মাসিক চলা অবস্থাতেই চেয়ারের মধ্যে তাকে হাত ও গোড়ালি একত্রে বেঁধে কয়েক ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়। এর ফলে তার জন্য ঘুমানো অসম্ভব ছিল।
মাইস বলেন, আমি হাঁটতে পারছিলাম না, কারারক্ষীরা আমাকে তুলে নিয়ে যেতো। বিশ্বের যে কোনো নারীর জন্যই গুরুতর এই অবস্থার মধ্যে প্রয়োজনীয় কোনো স্বাস্থ্য সহায়ক উপাদানই আমাকে দেয়া হয়নি। আমার দুই হাত শিকল দিয়ে আটকে রাখার কারণে রক্তাক্ত হয়ে যায় দেহের নিন্মাংশ। পরের দফা সামরিক জিজ্ঞাসাবাদে যেতে অস্বীকার করলে দায়িত্বশীল এক অসভ্য ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা আমাকে ধরে দেয়ালের সাথে ঠুকতে থাকে।
২৪ বছর বয়সী মাইস আবু গুশ পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছাকাছি কালান্দিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা। বিরজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের এই শিক্ষার্থীকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ইসরায়েলি বাহিনী।
৩৩ দিন তাকে ইসরায়েলি আল-মাসকোবিয়া ইন্টারোগেশন সেন্টারে নির্জন কারাবাসে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বন্দী অবস্থায় তার ওজন ১২ কেজি কমে যায়।
এমনকি মাইস তার শরীরে ব্যথা উপশমে পেইনকিলার চেয়েছিলেন, কিন্তু বর্বর ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাকে তাও দেয়নি। তিনি বলেন, তারা আমাকে হুমকি দেয় আমি মৃত বা প্যারালাইজড অবস্থায় এখান থেকে বের হবো। তারা আমাকে ধর্ষণেরও হুমকি দেয়।
তিনি জানান, বন্দী অবস্থায় তিনি চুলে ফিতা বাঁধার অনুমতি পাননি। কেননা ইসরায়েলি কর্মকর্তারা নির্যাতনের সময় প্রায়ই তার চুল ধরে টানাহেঁচড়া করতো। মাইস বলেন, নাস্তার সময় যে প্লাস্টিক ব্যাগ তারা খাবার দিত, তা ছিঁড়ে আমি চুল বাঁধতাম। কিন্তু তারা আমার কাছ থেকে তাও নিয়ে যায়। কয়েক দিন আমাকে এমন কক্ষে ফেলে রাখা হয় যেখানে ঘুমের সময় ইদুর এসে আমার ওপর আক্রমণ করেছিল।
প্রসঙ্গত, মাইসের বিরুদ্ধে অবৈধ ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রমে যোগ দেয়ার অভিযোগে ১৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েলি আদালত। গত বছরের ৩০ নভেম্বর তিনি মুক্তি পান।
সাননিউজ/এএসএম