আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের মহামারির ছোবলে আক্রান্ত বিশ্ব। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দুনিয়াজুড়ে মানুষের জীবন। এই বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে এই ভাইরাস। তবে গবেষণা বলছে, দুই বছর আগে নয় করোনা মানুষের জীবনে বিপর্যয় নিয়ে এসেছিল আজ থেকে আরও ২০ হাজার বছর আগে!
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ২০ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। মূলত পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ, যেমন- চীন, জাপান ও ভিয়েতনাম অঞ্চলের আধুনিক মানুষের ডিএনএ-তে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ছাপ রয়ে গেছে।
আর এ থেকেই করোনার জিনগত অভিযোজনের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। এই গবেষণার নামকরণ করা হয়েছে অ্যান অ্যানসিয়েন্ট ভাইরাল এপিডেমিক ইনভলবিং হোস্ট করোনাভাইরাস ইন্টারেক্টিং জেনেস মোর দেন ২০,০০০ ইয়ারস অ্যাগো ইন ইস্ট এশিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, পূর্ব এশিয়া থেকে যে একাধিক করোনাভাইরাস মহামারির উৎপত্তি হয়েছিল, তার সপক্ষে একাধিক প্রমাণ মিলেছে। প্রাচীন করোনা প্রজাতির কোনও ভাইরাস বা মানুষের দেহে যে রকম করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, সে রকমভাবেই ভিন্ন একটি ভাইরাসের জেরে পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন মানুষের মধ্যে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে।
গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, প্রাচীনকালের ভাইরাসের বিষয়ে জানতে পারলে বিবর্তনমূলক তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা আরও ভালোভাবে ভবিষ্যতে মহামারির পূর্বাভাস দিতে পারে।
কারেন্ট বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসিন সুইলমি এবং রে তোবলারের সেই গবেষণা। তাদের দাবি, পূর্ব এশিয়ায় বর্তমানে যে মানুষরা বসবাস করেন, তাদের ৪২টি জিনে করোনাভাইরাস প্রজাতির জিনগত পরিবর্তনের প্রমাণ মিলেছে।
সুইলমি এবং তোবলার জানিয়েছেন, তারা বিশ্বের ২৬টি জাতির আড়াই হাজারেরও বেশি জিন নিয়ে বিশেষ ধরনের বিশ্লেষণ করেছেন। তার ভিত্তিতে মানুষের ৪২টি ভিন্ন জিনে বিশেষ ধরনের প্রোটিনের সংকেত পাওয়া গেছে।
তারা বলেছেন, ‘এই ভাইরাস ইন্টারেক্টিং প্রোটিনসের (ভিআইপি) সংকেত পাওয়া গেছে মানুষের মাত্র পাঁচটি জাতির ক্ষেত্রে। তারা সবাই পূর্ব এশিয়ার বাসিন্দা। যা সম্ভবত করোনাভাইরাস প্রজাতির বিচরণের ক্ষেত্র ছিল। সেই তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়ার মানুষ প্রায় ২৫ হাজার বছর আগেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছিল।’
গবেষকদের দাবি, ৪২টি ভিআইপি মূলত ফুসফুসে প্রভাব ফেলতো। যা করোনার দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তা-ই নয়, তারা দাবি করছেন, ওই ভিআইপিগুলোর সঙ্গে যে সরাসরি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের যোগসূত্র ছিল, সে বিষয়েও নিশ্চিত তারা।
দুই গবেষক দাবি করেছেন, কয়েকটি ভাইরাস ইন্টারেক্টিং প্রোটিনস বা ভিআইপির জিন বর্তমানে করোনার চিকিৎসার জন্য ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবেও এটি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
সূত্র: সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ।
সাননিউজ/এএসএম