সান নিউজ ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের কারণে অব্যাহতভাবে কমে যাচ্ছে কর্মঘণ্টা। এ কারণে বিশ্বের প্রায় ১৬০ কোটি মানুষ জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে বলছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এই কর্মীসংখ্যা বিশ্বের মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক।
বুধবার করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে আইএলও তাদের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছে।
‘কভিড-১৯ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্’’ শিরোনামে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে (এপ্রিল থেকে) যে হারে কর্মঘণ্টা কমে যাচ্ছে তা আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি আশঙ্কাজনক।
আইএলও’র হিসাব মতে, সারা বিশ্বে শ্রমের সঙ্গে জড়িত মানুষের সংখ্যা ৩৩০ কোটি। করোনা পরিস্থিতির শুরুর দিকে কর্মসংস্থানের উপর যে প্রভাব ছিল, এখন তা আরও বেশি খারাপ।
এখন বিশ্বজুড়ে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে, যা প্রায় ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির সমান। চলমান সঙ্কটে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমতে পারে। দেশে দেশে লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি।
সংকটের প্রথম মাসে বিশ্বব্যাপী অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের আয় কমেছে ৬০ শতাংশ, যা আফ্রিকার দেশের ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় ৭০ শতাংশ।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মঘণ্টা হারাবে। ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া হারাবে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মঘণ্টা।
আইএলও বলছে, করোনাভাইরাস সঙ্কটে বিশ্বব্যাপী ৪৩ কোটি ৬০ লাখ ব্যবসায়িক উদ্যোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ কোটি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীক উদ্যোগ রয়েছে। চার কোটি রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য ব্যবসাও রয়েছে এর মধ্যে।
সংস্থাটির মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, কোটি কোটি মানুষের আয় না থাকার অর্থ হলো তাদের খাদ্য নেই। নেই তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা।
‘‘কোটি কোটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাকের ডগায় নিঃশ্বাস চলে এসেছে। তাদের সঞ্চয় নেই। ঋণ নেওয়ার সক্ষমতাও নেই। এটাই প্রকৃত চিত্র। যথাযথ সহায়তা না পেলে এ পরিস্থিতিতে তারা হারিয়ে যাবে।’’
আইএলও’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে: বিশেষত ঋণ ছাড় ও এ ব্যবস্থা সহজিকরণসহ প্রণোদনায় আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক মহামারি ও চাকরির ঝুঁকিতে থাকাদের রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ প্রয়োজন।
আইএলওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পটিআইনেন বলেন, জনসংখ্যার বিভিন্ন অংশ যেমন নারী, যুবক, বয়স্ক শ্রমিক, অভিবাসী ও চাকরিজীবী ব্যক্তিরা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আলাদাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তরুণ জনগোষ্ঠী জীবিকা হারাতে বসেছেন। বয়স্ক কর্মীরা কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় বেকারত্বের ঝুঁকিতে আছেন। নারীরা সামাজিক সুরক্ষার অভাবে রয়েছেন। স্ব-কর্মসংস্থানের কর্মীরা প্রচলিত সামাজিক সুরক্ষা প্রক্রিয়া দ্বারা সুরক্ষিত নন।
বিকল্প আয়ের উৎস ব্যতীত এই শ্রমিক এবং তাদের পরিবারগুলোর টেকার কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করে আইএলও। এ অবস্থায় কর্মীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য জরুরি, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী এবং নমনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইএলও।