ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন বেসামাল অবস্থা তখন কুম্ভমেলার আয়োজন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় এবং উত্তরাখণ্ড সরকার। সেখানে মানা হয়নি করোনা প্রোটোকল। টেস্ট না করেই এক লাখ পূণ্যার্থীকে করোনার নেগিটিভ রিপোর্ট দিয়েছে এজেন্সিগুলো।
গত এপ্রিলে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় জমায়েতের আয়োজন করা হয়েছিল হরিদ্বার গঙ্গার তীরে। এতে প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট লাখ পুণ্যার্থী জড়ো হতেন। সেখানে কিন্তু মাস্ক পরা, থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের কোনো ব্যবস্থায় ছিল না।
সম্প্রতি পাঞ্জাবের এক ব্যক্তির মোবাইলে একটি করোনা টেস্টের রিপোর্ট আসলে মহা জালিয়াতির এ তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। নড়েচড়ে উঠে সরকার। কেননা পাঞ্জাবের ওই ব্যক্তি কুম্ভে যাননি, করোনার টেস্টও করাননি। ভুয়া রিপোর্টটি নিয়ে তিনি মেডিকেল কাউন্সিলে অভিযোগ করলে শুরু হয় তদন্ত। উঠে আসে ভয়াবহ তথ্য। এরকম প্রায় এক লাখ ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে করোনার।
এপ্রিল মাসের পুরোটা জুড়েই ছিল কুম্ভমেলা। তবে এর মধ্যে ১২, ১৪ ও ২৭ তারিখ ‘শাহী স্নান’ বা সবচেয়ে পূণ্যের দিন বলে গণ্য করা হয়। ১২ এপ্রিল এ উপলক্ষে হরিদ্বারে ২৮ লাখেরও বেশি ভক্ত গঙ্গায় ডুব দিতে একত্রিত হয়েছিলেন।
করোনায় কুম্ভমেলার আয়োজন নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে দেশটির আদালত প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার টেস্ট করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেটিকে আমলে নিয়ে ২২টি এজেন্সিকে টেস্টের দায়িত্ব দেয় কুম্ভমেলা কমিটি। তেমনই একটি এজেন্সি পাঞ্জাবের ওই ব্যক্তিকে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল। তদন্তে দেখা যায়, একই ফোন নম্বরে, একই ঠিকানায় হাজার হাজার মানুষের নাম এন্ট্রি করা হয়েছিল। সেই জাল রিপোর্ট দেখিয়ে লাখ লাখ মানুষ কুম্ভে শাহী স্নানে অংশ নেয়।
কুম্ভমেলার আয়োজন নিয়ে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পুলিশ প্রধান অশোক কুমার বলেছিলেন, হরিদ্বারের কুম্ভমেলাকে তারা কোনও ‘সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট’ বলে মনে করছেন না।
মেলায় করোনা পরীক্ষা নিয়ে আরও নানাভাবে জালিয়াতি হয়েছে। ওই এজেন্সিগুলোতে স্যাম্পেল কালেক্টর হিসেবে যাদের নাম নথিভুক্ত আছে, তাদের অধিকাংশই রাজস্থানের ছাত্র। একজন জানান, তিনি কোনোদিন কুম্ভে যাননি। রাজস্থানের একটি ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে ভর্তি হয়েছেন। সেখানে তার কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সেই তথ্যই ওই এজেন্সি ব্যবহার করেছে।
করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি করায় এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে উত্তরাখণ্ড সরকার বিশেষ তদন্তের ব্যবস্থা করেছে। এক বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা একটি মাত্র কিট থেকে ৭০০ জনের করোনা পরীক্ষা করেছে বলে দেখানো হয়েছে।
সান নিউজ/এফএআর/এনএম