আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির বিচার শুরু হয়েছে। সোমবার (১৪ জুন) মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোর একটি আদালতে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচ অভিযোগের বিচার শুরু হয়েছে। ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকারের নির্দেশে গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন গত চার মাস ধরে।
অভিযোগগুলো হলো- রাষ্ট্রের গোপন তথ্য পাচার, নিয়মবহির্ভূতভাবে ওয়াকি টকি রাখা ও ব্যবহার, ক্ষমতায় থাকাকালে ঘুষ গ্রহণ, নিজের দাতব্যসংস্থার নামে অবৈধভাবে ভূমি অধিগ্রহণ ও করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়ায় গাফিলতি।
সু চির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন ও তার বিচার প্রক্রিয়াকে অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে যে বিবৃতি জাতিসংঘ দিয়েছে, পাল্টা এক বিবৃতিতে তা ইতোমধ্যে তা বাতিল করেছে ক্ষমতাসীন জান্তা।
মিয়ানমারের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নেত্রীর আইনজীবী মিন মিন সোয়ে সুচির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে দেশটির আইন ও বিচারবিভাগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জান্তার উত্থাপিত অভিযোগুলোর মধ্যে অন্তত দুইটি অভিযোগ বেশ স্পর্ষকাতর। এগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হলে বাকি জীবন কারাগারেই কাটাতে হবে তাকে।
২০২০ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। সেখানে কারচুপির অভিযোগ তুলে চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। মিয়ানমারের সেনা প্রধান মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।
ক্ষমতা দখলের পরপরই গৃহবন্দি করা হয় অং সান সু চিকে। গ্রেফতার হয় তার দল এনএলডির বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক। তারপর থেকে গৃহবন্দি অবস্থায়ই আছেন তিনি। সশরীরে কারও সঙ্গে তার দেখা করার অনুমতি দেয়নি জান্তা। অলাইনে ভিডিওর মাধ্যমে নিজের আইনজীবীর সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করতে পেরেছেন তিনি। সোমবার বিচার শুরুর দিন আদালতেও তাকে সশরীরে উপস্তিত করা হয়নি।
সু চির সমর্থকরা অবশ্য এতে দমে যাননি। সোমবার নেইপিদো ও মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভ মিছিল করেছন তারা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অবিলম্বে এই ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিচারপ্রক্রিয়া থামিয়ে তাকে (সু চি) নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া উচিত।’
বিচার শুরু হওয়ার আগে গত শুক্রবার এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার হাই কমিশনার মিশেল বেশেলেট। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই বিচার প্রক্রিয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে স্থায়ী করার ষড়যন্ত্র। শত শত মানুষকে হত্যা করে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে তারা।
বেশেলেট অভিযোগ করেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সরকার সু চিকে মুক্তি দেবে এবং দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমাধানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা করবে। কিন্তু তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি।
সোমবার মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের পররাষ্ট্র বিভাগ পাল্টা এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ হাই কমিশনারের বিবৃতি বাতিল করে বলেছে, ‘জাতিসংঘ একচোখাভাবে সবকিছু বিবেচনা করছে। তারা বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু দেখছে, কিন্তু বিদ্রোহীদের হামলায় যেসব সামরিক সদস্য মারা গেছেন, তাদের কথা জাতিসংঘ ধর্তব্যে আনছে না।’
সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই মিয়ানমার জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। কঠোর হাতে সেই আন্দোলন দমনে তৎপর হয় জান্তা। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বলছে, সেনা শাসনবিরোধী এই বিক্ষোভে জান্তার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। আহত হয় আরও অনেকে। এছাড়া সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী বর্তমানে কারাগারে আছে।
সান নিউজ/এমএইচ