সান নিউজ ডেস্ক : সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যের কিছু কোম্পানির সিইওদের বার্ষিক বেতন ১ ডলার কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে তারও কম অথবা শূন্য। কিন্তু তারপরেও তারা নিজেরা বিলিয়নিয়ার এবং এদের কেউ কেউ বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায়ও আছেন। ভাবছেন এটা কি করে সম্ভব?
কয়েক বছর ধরেই শীর্ষস্থানীয় সিইওদের বেতন ধারণাতীত হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, টেসলার সিইও ইলন মাস্ক ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছেন; কিন্তু টেসলা মোটরের দাবি, তাদের সিইওর প্রাপ্তি এখানে একেবারেই শূন্য ডলার।
তাই প্রশ্ন থেকেই যায় যে, বিশাল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর সিইওরা যদি বার্ষিক এক ডলার বা তারও কম বেতন নিয়ে থাকেন, তাহলে ফি বছর তাদের ব্যাংক একাউন্টে অর্থের পরিমাণ ফুলে ফেঁপে উঠছে কি করে?
বার্ষিক এক ডলার বেতন পাওয়া সিইওদের অধিকাংশই তাদের অফিস থেকে মোটা অংকের বোনাস বা ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। আবার বিপরীতে কেউ কেউ বলছেন, তারা বোনাস বা ক্ষতিপূরণ ত্যাগ করেন।
আসলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার পরিকল্পনাটি সিইওদের বেতন পাওয়ার বিষয়কে অবান্তর করে তোলে। কারণ কোম্পানির স্টক বা শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিইওরা উচ্চ হারে বোনাস বা ক্ষতিপূরণ পান; যদিও এসময় তাদের বেতন সেই এক ডলারই থাকে।
গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন
গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সিইওদ্বয়, ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন ২০০৪ সালে অনুরোধ করেছিলেন, তাদের বার্ষিক বেতন যেন এক ডলার ধরা হয়। ২০১৯ সালে তারা জানিয়ে দেন, গুগলের এখন আর দুজন সিইও ও একজন প্রেসিডেন্টের প্রয়োজন নেই। তারা সুন্দর পিচাইকে গুগলের নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০২০ সালে পিচাইয়ের বার্ষিক বেতন ছিল ২ মিলিয়ন ডলার।
সিইও'র দায়িত্বকে বিদায় জানালেও তারা এখনো গুগলের শেয়ারহোল্ডার ও বোর্ড সদস্য হিসেবে আছেন।
সেলিব্রেটি নেট ওর্থ সূত্র জানায়, বেতন এক ডলার নিলেও, ২০২১ সালে এসে ল্যারি পেজের নেট সম্পদের মূল্য ১০৪ বিলিয়ন ডলার যা তাকে বিশ্বের ৬ষ্ঠ ধনী ব্যক্তি করেছে। অন্যদিকে ১০০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে সের্গেই হয়েছেন ৮ম ধনী ব্যক্তি।
ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গ
ওয়াশিংটন পোস্ট সূত্র জানায়, মার্ক জাকারবার্গ '১ ডলার বেতন'-এর ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন ২০১৩ সালে। কোনরকম বোনাস না নেয়ার জন্যে তার খ্যাতি থাকলেও, ফেসবুকের স্টকের উপর তার ব্যাপক কর্তৃত্ব আছে। ২০১৫ সালে ইনসাইডারকে দেয়া সাক্ষাতকারে জাকারবার্গ বলেন, 'আমি যথেষ্ট টাকা আয় করেছি। এখন সেই টাকা কতটা ভালো উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারি সেদিকেই আমার নজর।'
ইলন মাস্ক, টেসলার সিইও ও সহপ্রতিষ্ঠাতা
ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আলটো ভিত্তিক আমেরিকান ইলেকট্রিক যানবাহন ও ক্লিন এনার্জি কোম্পানি টেসলার সিইও ও সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক কোনো বেতনই পান না। কিন্তু কোম্পানির কর্মক্ষমতার উপর ভিত্তি করে তিনি ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার নিজের পকেটে পুরেছেন বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। টেসলা ছাড়াও ইলন মাস্ক নিউরালিংক এরও সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা। তিনি স্পেসএক্স ও দ্য বোরিং কোম্পানিরও প্রতিষ্ঠাতা। ১৫১ বিলিয়ন ডলার নেট আয় নিয়ে তিনি এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি।
টুইটারের সিইও জ্যাক ডরসি
২০১৯ সালে টুইটার জানায়, তাদের সিইও ডরসির বার্ষিক বেতন ১ দশমিক ৪০ ডলার। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি তার এই বেতনটুকু ছাড়া আর কোনো ক্ষতিপূরণ বা বোনাসও নেননি।
তবুও ৪৪ বছর বয়সী জ্যাক ডরসির নেট সম্পদের পরিমাণ ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে ফোর্বস।
ইয়াহুর প্রতিষ্ঠাতা ও 'চীফ ইয়াহু' ডেভিড ফিলো
ইয়াহুর প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ফিলোও বেতন হিসেবে বেছে নিয়েছেন 'এক ডলার' পন্থাকে। কোনোরকম ক্ষতিপূরণ না নিলেও ডেভিডের নেট সম্পদমূল্য এখন ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
ইভান স্পিগেল, স্ন্যাপচ্যাট এর সিইও ও সহপ্রতিষ্ঠাতা
মাত্র ৩১ বছর বয়সেই বিলিয়নিয়ার বনে যাওয়া ইভান থমাস স্পিগেল স্ন্যাপচ্যাট এর সিইও ও সহপ্রতিষ্ঠাতা। ২০১৭ সালে স্ন্যাপচ্যাট জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই স্পিগেল তার বেতন ৫ লাখ ডলার থেকে সোজা ১ ডলারে নামিয়ে এনেছেন। কিন্তু ২০২১ এ এসে তার নেট সম্পদের মূল্য প্রায় ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
সান নিউজ/এসএম