আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষ। অস্থায়ী সুরক্ষিত স্থিতি বা টেম্পোরারি প্রটেকটেড স্ট্যাটাস (টিপিএস)-এর জন্য তারা আর আবশ্যকীয় গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এলিনা কাগান চলতি সপ্তাহে তার রুলিংয়ে বলেন, ফেডারেল ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি এদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তাহলে তারা গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করার অনুপযুক্ত।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে কংগ্রেস টিপিএস আইন পাস করে। এ আইনে বলা হয়েছে যে, যদি কোনো দেশে যুদ্ধ বা গৃহযুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা গ্যাং ভায়োলেন্সের মতো অন্য যে কোনো কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে এসে আশ্রয় প্রার্থণা করে- তখন সেসব দেশের নাগরিকরা শুধু ওয়ার্কপারমিট নিয়ে অস্থায়ীভাবে বসবাস করার যোগ্য বলে গণ্য হবে। তবে এক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়েছে যে যদি টিপিএসপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ দেশে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে, তাহলে তাকে তার নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে।
টিপিএস সুবিধা লাভ করে বর্তমানে এল সালভাদর, হাইতি, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, মিয়ানমার, নেপাল, সাউথ সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেনের লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছে। এই ১৩টি দেশের ইমিগ্রান্টরা টিপিএস এর আওতায় ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছে। নিজ নিজ দেশে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে তাদের ফিরে যাওয়ার শর্ত থাকলেও গত ত্রিশ বছর আগে পাস হওয়া আইনের সুযোগ নিয়ে অনেক টিপিএসধারী ইতোমধ্যে গ্রিনকার্ডও লাভ করেছে। কিন্তু যারা গ্রিনকার্ড পায়নি তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা কিছুটা নমনীয় ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন টিপিএস প্রাপ্তদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করার নির্দেশ দিয়েছিল। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন টিপিএস প্রাপ্তদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করার নির্দেশ দেয়। শুধু তাই নয়, হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এরই মাঝে টিপিএস সুবিধা প্রাপ্তদের কি ধরনের শর্তে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস বা গ্রিনকার্ড দওিয়া যেতে পারে সেই সংক্রান্ত একটি আইন পাস করেছে। কিন্তু সেই বিলটি এখন পর্যন্ত শুনানির জন্য সিনেট ফ্লোরে গড়ায়নি। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন যে বিলটি সিনেটে পর্বতসম বাধার সম্মুখীন হবে এবং পাস হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
এ অবস্থার মধ্যে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে বলেছে যে টিপিএস সুবিধাভোগীরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের জন্য গ্রিনকার্ডের আবেদন করার উপযুক্ত নয়। ১৩টি দেশের লোকজন টিপিএসএর আওতায় অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেলেও মূলত তিনটি দেশ এল সালভাদর, হন্ডুরাস ও হাইতির লোকজনই বেশি। টিপিএসপ্রাপ্ত মোট ইমিগ্রান্ট সংখ্যা ৪ লক্ষাধিক। বিচারপতি এলিনা কাগান তার লিখিত আদেশে বলেছেন যে, হাজার হাজার মানুষ মানবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার অনুপযুক্ত বিবেচিত হবেন। কারণ তারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেননি। যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন এবং বর্তমানে গ্রিনকার্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রচলিত ইমিগ্রেশন আইনে তাদের গ্রিনকার্ডের আবেদন অনুমোদন করা সম্ভব নয়।
এল সালভাদরের এক দম্পতি ১৯৯০ সাল থেকে টিপিএস সুবিধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তারা গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। এর ফলে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এক রুলিংয়ে বলেন, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ভিন্ন দেশের নাগরিকরা ফেডারেল ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী গ্রিনকার্ড বা স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করার যোগ্য নয়।
বিচারপতি কাগান টিপিএস সুবিধাভোগীদের গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে হাউজে ইতোমধ্যে পাস হওয়া বিলের কথাও উল্লেখ করেছেন, যেটি সিনেটে পাস হওয়া অনিশ্চিত। তবে তিনি একথাও বলেছেন যে যারা বৈধ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার পর টিপিএস সুবিধা ভোগ করছেন তাদের ভিসার মেয়াদ যদি উত্তীর্ণ হয়েও যায় তাহলে তারা গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টিপিএস সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন যে যে কোনো ধরনের আইনের পরিবর্তন তিনি সমর্থন করবেন। কিন্ত বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্প প্রশাসনের মতই বলছে যে প্রচলিত আইনে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীরা স্থায়ীভাবে বসবাস বা গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করতে পারে না।
সান নিউজ/এসএম