বিনোদন ডেস্ক: ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে ইউনাইটেড আরব লিস্ট (ইউএএল) দেশটির নতুন জোট সরকারের অংশ হতে যাচ্ছে। এই জোট সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাবেক মিত্র নাফতালি বেনেত।
যিনি দখলকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলে একীভূত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন অনেক ফিলিস্তিনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে।
নাফতালি বেনেত ও মধ্যপন্থী নেতা ইয়ার লাপিদের সঙ্গে ভিন্নমত দূরে রেখে আট দলের জোট সরকারে যোগ দিচ্ছেন ইউনাইটেড আরব লিস্টের নেতা মনসুর আব্বাস। এই জোট ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর শাসনের অবসানের লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছে।
ইসরায়েলে ইসলামিক মুভমেন্টের দক্ষিণাঞ্চলের উপ-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৪৭ বছর বয়স্ক মনসুর আব্বাস। ১৯৯৫ সালে তিনি বর্তমানে নিষিদ্ধ ইসলামিক মুভমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসেন।
তখন তিনি দাবি করেছিলেন, এর ফলে ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে সহযোগিতা করবে। ইসরায়েলের ৯০ লাখ জনসংখ্যা ২০ শতাংশ ফিলিস্তিনি।
মার্চ মাসের নির্বাচনের আগে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের প্রধান বিরোধী দল জয়েন্ট আরব লিস্ট থেকে বেরিয়ে যায় আব্বাসের ইউএএল। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন তিনি।
তখনই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য প্রয়োজনে নেতানিয়াহু ও অন্যান্য ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে কাজ করবেন। এই ভাঙনে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিত্ব দুর্বল হয়। গত বছরের নির্বাচনে জয়েন্ট আরব লিস্ট ১৫টি আসনে জয়ী হয়েছিল।
সর্বশেষ নির্বাচনে ইউএএল চারটি আসনে জয়ী হয়ে বেনেত ও লাপিদের জোটে যোগ দিচ্ছে নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরাতে। আব্বাস দাবি করেছেন, জোটের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত শহরগুলোর অবকাঠামোর উন্নতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১৬০০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ইউএএল আরও ঘোষণা দিয়েছে, তাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে নতুন সরকার অনুমতি ছাড়া ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ করবে না এবং সরকারিভাবে নেগেভ মরুভূমির বেদুইন শহরকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
জোট সরকার গঠনের সমঝোতা স্বাক্ষরের পর মনসুর আব্বাস সমর্থকদের বলেন, দেশে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ভারসাম্য বদলে দিতে আমরা সরকারে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আইনজীবী ডায়ানা বুট্টু বলেন, আব্বাস নিজেকে ইসরায়েলি কিং মেকার মনে করে বড় ভুল করছেন। তিনি জোটকে একত্রিত হতে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু ফিলিস্তিনি হিসেবে আমাদের কিং মেকার হওয়ার ভূমিকায় থাকা উচিত না। আমাদের দায়িত্ব হলো সম্প্রদায়কে রক্ষঅ করা।
তিনি আরও বলেন, এটি হাস্যকর, খুবই নির্বোধ এবং এবং ইসরায়েলি রাজনীতি ও জায়নবাদ সম্পর্কে ভুল ধারণার প্রকাশ।
ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কাজ করা মোসাওয়া সেন্টারের পরিচালক জাফর ফারাহ জানান, জোটে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা হয়ত পাওয়া যাবে। কিন্তু এটা নতুন কিছু নয়। নেতানিয়াহুর সরকারও আরব জনগোষ্ঠীকে এমন কিছু সুবিধা দিতে রাজি আছে।
ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদী বালাদ পার্টির নেতা সামি আবু শিহাদেহ বলেন, চরমপন্থী সরকারের অংশ হতে আব্বাসের এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের ভেতরে ও দখলকৃত এলাকায় ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এটি খুব বিপজ্জনক। মনসুর আব্বাস জাতিভ্রষ্ট ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
সাননিউজ/এএসএম