আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালি ও নাইজার সীমান্তবর্তী গ্রাম বুরকিনা ফাসোতে সশস্ত্র বন্দুকধারীদের হামলায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ১৩৮ বেসামরিক নাগরিকের। আহত হয়েছে আরও অনেকে। স্থানীয় সময় শনিবার (৫ জুন) মধ্যরাতে শুরু হয় নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞ।
২০১৫ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ এ হামলার ঘটনায় দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক চলছে, যা শেষ হবে সোমবার মধ্যরাতে।
ঘটনাস্থল মালি ও নাইজার সীমান্তবর্তী বুরকিনা ফাসোর উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রাম। ইয়াঘা প্রদেশের প্রধান শহর সেবা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট গ্রামটির নাম সোলহান।
হামলায় নিহতদের গণহারে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং গণকবর থেকে আরও মরদেহ উদ্ধারের ফলে প্রাণহানি বাড়তে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে প্রশাসন।
কোনো হামলায় একসঙ্গে এত মানুষকে হত্যার ঘটনা বুরকিনা ফাসোতে এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংঘাতপ্রবণ দেশটির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা। কোনো বয়সী মানুষকেই ছাড় দেয়নি সন্ত্রাসীরা।
জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ও আইএস সমর্থিত সন্ত্রাসীরা সামরিক সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট রক মার্ক ক্রিস্টিয়ান কাবোর হত্যাকাণ্ডকে ‘বর্বর’ ও ‘ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘এই অপশক্তিদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে কাজ করতে হবে পুরো জাতিকে।’
হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ডিফেন্স অফ দ্য মাদারল্যান্ডের (ভিডিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু হয়। পরে গ্রামজুড়ে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালায় সন্ত্রাসীরা। সবশেষে বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা।
বুরকিনা ফাসোর সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করে বেসামরিক প্রতিরক্ষা গোষ্ঠী ভিডিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কাজে যোগদানের আগে দুই সপ্তাহের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ভিডিপি সদস্যদের।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত ভিডিপির দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক এ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
বুরকিনা ফাসো, মালিসহ আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিতে শুরু করে ২০১২ ও ২০১৩ সাল থেকে। মালির উত্তরাঞ্চলে বড় অংশ দখলও করে নেয় তারা।
অঞ্চলটির পাঁচ দেশকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কয়েক বছর ধরে সহযোগিতা করছে সাবেক উপনিবেশ স্থাপনকারী রাষ্ট্র ফ্রান্সের সেনাবাহিনী। যদিও হামলা, অপহরণ বন্ধ হয়নি।
বুরকিনা ফাসোতে সহিংসতায় গত কয়েক বছরে প্রাণ গেছে প্রায় দেড় হাজার মানুষের। দেশটিতে গৃহহীন হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। সূত্র : ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সান নিউজ/এসএম