আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: গত তিন দশক ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাব দিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ইসরায়েল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান হামলার প্রতিবাদে গাজা উপত্যকা থেকে হামাসও ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট হামলা চালিয়েছে। হামাসের এসব হামলায় মোটামুটি রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েল।
দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের দখলদারিত্বের কারণে ফিলিস্তিন ভৌগোলিকভাবে দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জর্দান সীমান্তবর্তী ফিলিস্তিনি অঞ্চলটি হলো পশ্চিমতীর এবং জেরুজালেম; অপরদিকে মিসর সীমান্তবর্তী ফিলিস্তিনি অঞ্চলটি হলো গাজা উপত্যকা। হামাস নিয়ন্ত্রণ করে গাজা উপত্যকা। আর পশ্চিমতীর নিয়ন্ত্রণ করে আরেকটি ফিলিস্তিনি দল ফাতাহ।
গাজা উপত্যকায় সব সময়ই কঠোর অবরোধ দিয়ে রাখে ইসরায়েল। কিন্তু হামাস তাহলে কিভাবে এত রকেট বানাচ্ছে?
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের স্থল ও সমুদ্রপথ অবরোধের শিকার। মিসরের সাথে গাজার সামান্য সীমানা থাকলেও মিসরীয় শাসকগোষ্ঠী সেটিও ব্লক করে রেখেছে।
ইসরায়েলকে প্রতিরোধ করতে হামাসের ব্যাপক অস্ত্র ও মিলিটারি সরঞ্জাম দরকার। কিন্তু অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অস্ত্র ও মিসাইল আমদানি করা কষ্ট সাধ্য নয়, বরং অসম্ভবই এক প্রকার। অর্থাৎ বহির্বিশ্ব থেকে হামাসের সামরিক সাহায্য লাভের কোনো সুযোগ নেই।
এত বিপুল সংখ্যক রকেট হামাসকে বানাতে হচ্ছে তার অভ্যন্তরীণ শক্তি দিয়ে। কিন্তু এত রকেট বানানোর কাঁচামালের যোগান কোথা থেকে আসছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিছু যুদ্ধজাহাজ গাজা উপত্যকার সমুদ্র উপকূলে ডুবে গিয়েছিল। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের ডুবুরি দল সম্প্রতি এই জাহাজগুলোর সন্ধান পেয়েছে। এই জাহাজগুলোর বিভিন্ন সরঞ্জাম এখনো বহাল তবিয়তে অক্ষত রয়েছে।
হামাসের ডুবুরি দল প্রতিনিয়ত জাহাজগুলো থেকে এসব সরঞ্জাম উদ্ধার করে আনে। জাহাজ থেকে আনা এসব সরঞ্জাম বিভিন্ন অস্ত্রের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি জাহাজ থেকে প্রাপ্ত হালকা জং ধরা অস্ত্র পরে হামাসের কারখানায় নেয়া হয়।
হামাসের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম এই কাঁচামালগুলো থেকেই তৈরি করে নানা ধরনের অস্ত্র এবং জং ধরা অস্ত্রগুলোকে করে তোলে অত্যাধুনিক।
ইদানীং হামাস প্রতিনিয়ত তাদের অস্ত্রের মজুদ বাড়াচ্ছে এবং ইসরায়েলের হামলার পাল্টা জবাব দিতে সক্ষম হচ্ছে। আর এর পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান এই ডুবন্ত জাহাজগুলোরই।
তবে শুধু ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজ থেকে যে হামাস অস্ত্র তৈরি করছে তা নয়। ইসরায়েলের তৈরি করা পাইপলাইনও হামাসের অস্ত্র তৈরির কাঁচামালে যোগানদাতা!
গাজা সিটির মাটির নিচ দিয়ে ইসরায়েল কিছু পানির লাইন স্থাপন করেছিলো। মূলত ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ পানির চাহিদা মেটাতে গাজা থেকে পানি চুরির জন্য এসব লাইন বসানো হয়। যদিও একটা সময় পর ইসরায়েলের এই লাইনটি হামাসের নজরে আসে। তারপরই হামাস লাইনটির কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়।
পাশাপাশি এখন লাইনটিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ থেকে হামাস বিভিন্ন অস্ত্রের কাঁচামাল পাচ্ছে।
সাননিউজ/এএসএম