সান নিউজ ডেস্ক : বিশ্বের অন্তত ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় না আনতে পারলে করোনা মহামারি নির্মূল সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। শুক্রবার (২৮ মে) ডব্লিউএইচও’র ইউরোপীয় শাখার পরিচালক হ্যান্স ক্লাগ ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ কথা বলেন।
বিশ্বজুড়ে গণটিকাদান কর্মসূচি কাঙ্খিত মাত্রার তুলনায় অনেক ধীরগতিতে চলছে বলে সমালোচনা করেছেন ক্লাগ। পাশাপাশি, করোনাভাইরাসের বিভিন্ন অভিযোজিত ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) উদ্ভব ও এগুলোর উচ্চ সংক্রমণক্ষমতার প্রেক্ষিতে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তিনি।
শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে এএফপিকে হ্যান্স ক্লাগ বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই মানুষের মধ্যে এক প্রকার গা ছাড়া মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা মহামারি শেষ হয়ে গেছে, কিংবা যাচ্ছে— এমন চিন্তা-ভাবনা করার কোনো সুযোগ এখন পর্যন্ত নেই। বিশ্বের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার আগ পর্যন্ত এই মহামারি নির্মূল হবে না।’
গত এক বছর ধরে বিশ্বজুড়ে মানবদেহে সংক্রমিত হতে হতে কয়েকবার অভিযোজনের (মিউটেশন) মধ্যে দিয়ে গেছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাস। এর ফলে এই ভাইরাসটির একাধিক প্রজাতি বা ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) উদ্ভব ঘটেছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে নতুন প্রজাতি বা ধরনগুলো প্রচলিত সার্স-কোভ-২ মূল ভাইরাসটির তুলনায় অনেক বেশি প্রাণঘাতী ও উচ্চ সংক্রমণশীল।
সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হ্যান্স ক্লাগ বলেন, ‘এই ব্যাপারটি সত্যিই খুব উদ্বেগের, কারণ আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি প্রচলিত সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটির তুলনায় এর ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট বি.১১৭ এর সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি।’
‘আবার, এখন দেখা যাচ্ছে— ভাইরাসটির ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বি.১৬১৭ এর ক্ষয়ক্ষতির ক্ষমতা ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি।’
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, করোনাভাইরাসের ক্রমাগত অভিযোজন এবং এর ফলে নিত্য নতুন ধরনের আবির্ভাব বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিকে আরো তীব্র করে তুলছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় টিকাদান কর্মসূচীকে আরও গতিশীল করা।
ডব্লিউিএইচওর ইউরোপীয় শাখার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপের মোট ৫৩ টি দেশ এবং এলাকার (টেরিটরি) মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৬ শতাংশকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া গেছে।
অন্যদিকে ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছেন। টিকার দুই ডোজ নেওয়া সম্পূর্ণ করেছেন আরও কম— ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।’
টিকাদান কর্মসূচির এই ধীরগতি ইউরোপে করোনা মহামারিকে দীর্ঘস্থায়ী করছে উল্লেখ করে সাক্ষাৎকারে হ্যান্স ক্লাগ বলেন, ‘সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। এই মহমারিকে লাগাম টানতে হলে এই মুহূর্তে যে দিকে সবচেয়ে বেশি মনযোগ দিতে হবে, তা হলো গতি।’
সান নিউজ/এসএম/বিএস