আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েল সেনাবাহিনী ও গাজার প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে সংঘাত বন্ধে শুক্রবারেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির অন্যতম জাতীয় দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে হামাস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন মিশরের সরকারি কর্মকর্তারা। এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য— হামাসকে রকেট হামলা থেকে বিরত রেখে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে নিয়ে আসা।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও সংঘাত থামাতে চাইছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা পত্রিকাটিকে বলেন, ‘যেভাবে প্রক্রিয়া এগোচ্ছে, তাতে আমরা ধারণা করছি, উভয়পক্ষের যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। খুব শিগগিরই…হয়তো শুক্রবারই উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে।’
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, গাজার কট্টর ইসলামন্থি জঙ্গি সংগঠন প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ হামাস-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠার সুযোগ খুঁজছে।
এরা যদি সক্রিয় হয়, সেক্ষেত্রে ওই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সত্যিকার অর্থেই হুমকির মুখে পড়বে।’
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে সেখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মধ্যকার সংঘাত গড়িয়েছে দশম দিনে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলা ও গোলা বর্ষণে ইতোমধ্যে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৩০ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে ৬৪ জন শিশু ও ৩৪ জন নারী আছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যদিও ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার’ ঘোষণা দিয়েছেন, তবে গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগ্রহ জানিয়েছেন হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক সম্প্রতি লেবাননের টেলিভিশন চ্যানেল মায়াদিন টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, উভয়পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার পক্ষে যে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি হয়েছে, তা সফল হবে।’
গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতকারীদের অবৈধ দখলদারিত্ব ও স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন সেখানে পুরুষানুক্রমে বসবাসরত স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা। তবে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তার সূত্রপাত ঘটে গত ০৯ মে।
ওই দিন ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) রাত। ০৯ মে রাতে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা।
স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন , এ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রায় ৪ হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের ছোড়া রকেটে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ১২ জন মারা গেছেন।
হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, যা এখনও চলছে।
বৃহস্পতিবারও গাজার উত্তরে হামাসের স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েল শতাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ইসরায়েলি হামলার পাল্টায় হামাসও ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে রকেট ছুড়েছে।
সামরিক বাহিনীর টানা হামলায় প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।
সাননিউজ/এএসএম