আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা মামলায় গ্রেফতারের খবর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরুত্বসহ প্রকাশ করেছে।
সাংবাদিককে গ্রেফতার এবং হেনস্তার এই ঘটনায় বাংলাদেশে মুক্ত সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধের চেষ্টাও বলে উল্লেখ করা হয়েছে এসব গণমাধ্যমে।
মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) ‘দুর্নীতি প্রকাশকারী হিসেবে পরিচিত সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি দুর্নীতির বিষয়ে শক্তিশালী প্রতিবেদন তৈরির জন্য বাংলাদেশে পরিচিত এক সাংবাদিককে ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আইনে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিধান রয়েছে।
এপি বলছে, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সরকারের ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে করা চুক্তির নথির ছবি নিজের মোবাইলে ধারণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ভ্যাকসিন কেনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার কক্ষে অপেক্ষার সময় তিনি নথির ছবি তুলেছেন বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য দফতরের দুর্নীতির সংবাদের জন্য রোজিনা ইসলাম পরিচিত। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় মিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটায় অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে সম্প্রতি তার বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
রোজিনা ইসলামের বোন সাবিনা পারভিন এপিকে বলেছেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ব্যক্তিগত সহকারীর কক্ষে সোমবার ৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছিল। ওই সময় তাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ‘রোজিনা ইসলাম: কোভিড প্রতিবেদনের জন্য বাংলাদেশে সাংবাদিক গ্রেফতার’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলেছে, একজন বাংলাদেশি নারী অনুসন্ধানী সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা নিয়ে দেশটিতে তিনি বেশ কিছু আলোচিত প্রতিবেদন করেছেন। তাকে গ্রেফতারের পর দেশটির শত শত সাংবাদিক প্রতিবাদ শুরু করেছেন।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সোমবার রাতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভারতীয় সরকারি বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) বলছে, বাংলাদেশি জ্যেষ্ঠ একজন সাংবাদিক, যিনি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পরিচিত তাকে ঔপনিবেশিক আমলের দাফতরিক গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বাংলাদেশের শত শত সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছেন।
বার্তাসংস্থা এপির প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রভাবশালী আরেক দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি দুর্নীতির বিষয়ে খবর তৈরির জন্য পরিচিত একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঔপনিবেশিক আমলের দাফতরিক গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন করে নিজের মোবাইলে সরকারি নথির দৃশ্য ধারণের দায়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে রোজিনা ইসলামের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড অথবা ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
১৯২৩ সালের দাফতরিক গোপনীয়তা আইনের আওতায় সোমবার মধ্যরাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতার রোজিনা ইসলাম পুলিশি হেফাজতে সোমবার রাত কাটিয়েছেন।
এছাড়াও অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গ্রেফতারের খবর ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু, মধ্যপ্রাচ্যের দৈনিক গালফ নিউজ, এবিসি নিউজসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে।
নিন্দার ঝড়
বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় উৎসাহদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক (জিআইজেএন) এক টুইট বার্তায় রোজিনা ইসলামের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে।
সোমবার রাতে এক টুইট বার্তায় আন্তর্জাতিক এই সংস্থা বলেছে, ‘বাংলাদেশে কী চলছে? দেশটির অন্যতম একজন নারী সাংবাদিককে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়— সাংবাদিকতা অপরাধ নয়। পুরো বিশ্ব দেখছে।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে আসা নিউইয়র্কভিত্তিক দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) এক টুইট বার্তায় রোজিনা ইসলামের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে অনুসন্ধানী এই সাংবাদিককে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
এক টুইটে সিপিজে বলেছে, বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতারের খবরে আমরা গভীরভাবে শঙ্কিত। তিনি সাংবাদিক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইস্টারন্যাশনাল এক টুইট বার্তায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গ্রেফতার মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর হামলা। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে এবং নিশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
সাননিউজ/এএসএম