আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, হামলার শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২১২ জন।
নিহতদের মধ্যে ৬১ জন শিশু ও ৩৬ জন নারী আছেন। এছাড়া সেখানে আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি।
গাজার মূল শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বসতকারদের (সেটলার) অবৈধ দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ গড়িয়েছে নবমদিনে। তবে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের প্রভাবশালী দল হামাস ও ইসরায়েল সেনা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত ১০ মে থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে প্রায় ৩ হাজার ৩৫০টি রকেট ছুড়েছে হামাস। এর মধ্যে শুধু সোমবারই তারা ছুড়েছে ২০০ রকেট।
তার আগের দিন, রোববার মধ্যরাতের পর গাজার মূল শহরসহ আশপাশের এলাকায় ৫০টি যুদ্ধ বিমান নিয়ে ২০ মিনিট ধরে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছিল ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা বলেছিলেন, বিমান বাহনী ইসরায়েলের জন্য ‘বিপজ্জনক’ ৩৫টি লক্ষ্যবস্তু ও হামাস যোদ্ধাদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গপথ, যেগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার, ধ্বংস করতে সমর্থ হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাদের অভিযানে এ পর্যন্ত হামাসের সামরিক শাখার অন্তত ১৩০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
এদিকে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক এই সংঘাতের উত্তেজনা ছড়িয়েছে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রতিবেশী দেশ লেবাননেও। ১৮ মে মধ্য রাতের পর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলকে লক্ষ্য করে ৬ টি গোলা (শেল) ছুঁড়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ গেরিলা বাহিনী। তবে সেগুলো লেবানন-ইসরায়েলে সীমান্ত অতিক্রম করে খুব বেশিদূর যেতে পারেনি।
এদিকে সংঘাত এখন পর্যন্ত থামার কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় অবশেষে নড়েচড়ে বসছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করে গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
হোয়াইট হাউস থেকে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ইসরায়েল এবং গাজার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে নেতানিয়াহুর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাইডেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে আনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মার্ক মাইলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘সেখানকার অবস্থা দিন দিন যে রূপ নিচ্ছে, তাতে এখনই যুদ্ধ বিরতিতে না গেলে ওই অঞ্চলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার শঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে সেখানে।’
ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতকারীদের অবৈধ দখলদারিত্ব ও স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন গাজা অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। তবে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তার সূত্রপাত ঘটে গত ০৯ মে।
ওই দিন ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) রাত। ০৯ মে রাতে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।
হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, যা এখনও চলছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।
সান নিউজ/এসএম