আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বেআইনিভাবে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গ্রেফতারকে ‘বেআইনি’ বলে উল্লেখ করেছেন দলের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি তাকে গ্রেফতার করতেও সিবিআই কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার সকাল ১০ টার দিকে চাঞ্চল্যকর নারদ দুর্নীতি মামলায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নগর উন্নয়ন ও পৌরসভা বিষয়ক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং রাজ্য বিধানসভা সদস্য মদন মিত্র ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে গেফতার করে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)।
গ্রেফতারের পর এই চারজনকে নিয়ে আসা হয় পশ্চিমবঙ্গে সিবিআইয়ের কার্যালয় নিজাম প্যালেসে। যদিও সিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন— গ্রেফতার নয় মামলায় বর্ণিত অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তাদের আনা হয়েছে; তবে সংস্থাটির সূত্র জানিয়েছে, নিজাম প্যালেসে নেবার পরপরই গ্রেফতার নামায় (অ্যারেস্ট মেমো) স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে এই চারজনের।
চারজনকে গ্রেফতারের এক ঘণ্টার মধ্যেই, ১০ টা ৪৭ মিনিটে এ নিজাম প্যালেসে উপস্থিত হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বেআইনীভাবে এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূল সভানেত্রী।
কিন্তু সিবিআই কর্মকর্তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগে অপারগতা জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাকেও গ্রেফতার করুন, আমাকে গ্রেফতার না করা হলে নিজাম প্যালেস ছাড়বো না।’
তৃণমূল নেতা আইনজীবী অনিন্দ্য রাউত সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সবাই বিধানসভার সদস্য। দুর্নীতির মামলায় তাদের গ্রেফতার করতে হলে বিধানসভা স্পিকারের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। সিবিআই সেই অনুমতি নেয়নি।’
‘তাছাড়া তাদের গ্রেফতারের আগে আগাম কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। ফলে, গোটা প্রক্রিয়াটিই বেআইনি হয়েছে।’
অবশ্য সিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চারজনকে গ্রেফতারের আগে রাজ্যপালের অনুমতি নিয়েছেন তারা। তৃণমূল নেতা অনিন্দ্য রাউত জানিয়েছেন, এখনও নিজাম প্যালেসে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত বছরের মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর ভিডিও ফুটেজ ফাঁস করে দিল্লির নারদ নিউজ ডটকম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল।
নিউজ পোর্টালটি দাবি করে , তাদের হাতে রয়েছে এ-সংক্রান্ত ৫২ ঘণ্টার ফুটেজ। ১৪ মার্চ সেই ভিডিওটি কলকাতার রাজ্য বিজেপির কার্যালয়ে ফাঁস করে বিজেপিও।
ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রীদের ঘরে ঘরে, হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। এই স্টিং অপারেশনে যাদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ এসেছিল, তারা হলেন মুকুল রায় (সাবেক রেলমন্ত্রী-২০ লাখ টাকা), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (পঞ্চায়েতমন্ত্রী-৫ লাখ), সুলতান আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), সৌগত রায় (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), শুভেন্দু অধিকারী (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), কাকলি ঘোষ দস্তিদার (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (কলকাতার মেয়র-৪ লাখ), মদন মিত্র (সাবেক পরিবহনমন্ত্রী-৫ লাখ), ইকবাল আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), ফিরহাদ হাকিম (পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী-৫ লাখ) এবং মহম্মদ আহমেদ মির্জা (জেষ্ঠ্য পুলিশ কর্মকর্তা-৫ লাখ টাকা)।
নারদকাণ্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন—মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী বর্তমানে বিজেপির ‘হেভিওয়েট’ নেতা। মুকুল রায় বর্তমানে সর্বভারতীয় বিজেপির সহসভাপতি এবং শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা।
সান নিউজ/এসএম