আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নেতাদের একাংশ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে হোয়াইট হাউসের নৈশভোজ বর্জনের ডাক দিয়েছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতি সংঘর্ষে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে একটি টুইটবার্তা প্রকাশের পরই এ আহ্বান জানান তারা।
গাজায় দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঈদ নৈশভোজ বর্জনের এই ডাক দেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নেতাদের একটি সংগঠন।
রোববার (১৫ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (১৫ মে) ‘আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইন’ নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে (অ্যাডভোকেসি গ্রুপ) এই আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি ‘প্যালেস্টাইনের সঙ্গে ঈদ’ (ঈদ উইথ প্যালেস্টাইন) নামে একটি প্রতিবাদী স্লোগানও নির্ধারণ করেছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফরম টুইটারে শনিবার হোয়াইট হাউস থেকে একটি টুইট করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘আজ প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি পুনরায় নিশ্চিত করেছেন যে, হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর থেকে অবশ্যই ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। ইসরায়েলে সাম্প্রতিক অব্যাহত রকেট হামলার নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি।’
এই টুইট প্রকাশের কিছু সময় পর একটি বিবৃতি দেওয়া হয় আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইনের পক্ষ থেকে। বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি এবং দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারিত্ব, রমজান মাসে আল-আকসায় মুসলিমদের নির্যাতন ও ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন।’
‘আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের প্রতি সংহতির নিদর্শন স্বরূপ সংগঠনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের সকল মুসলিম নেতাদের হোয়াইট হাউসের ঈদ নৈশভোজ বর্জনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
পাশাপাশি আমাদের ‘ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ঈদ’ (ঈদ উইথ প্যালেস্টাইন) বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
এর আগে গত ১৩ মে ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে একটি টুইট করেছিলেন জো বাইডেন। ওই টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে অবশ্যই ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।
এটা সত্যিই মেনে নেওয়া অসহ্য যে ইসরায়েলের নাগরিকরা প্রতি মুহূর্তে রকেট হামলার আতঙ্কে বসবাস করছে। এ কারণেই আত্মরক্ষার্থে ইসরায়েল যা করছে, তাতে আমাদের প্রশাসনের সমর্থন আছে।’
অবৈধ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে গত ৯ মে রাতে আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।
ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। সেই হামলা এখনও অব্যাহত আছে। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।
এদিকে, হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, যা এখনও চলছে।
সাননিউজ/এএসএম