আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউরোপে ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সমর্থন করাকে যেন অপরাধের দৃষ্টিতে দেখছে। সেখানে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদে বিক্ষোভ আটকে দেয়া হচ্ছে, সরিয়ে ফেলা হচ্ছে ফিলিস্তিনপন্থী ব্যানার-পোস্টার।
কেউ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আওয়াজ তুললেই পড়তে হচ্ছে ইসরায়েলপ্রেমীদের তোপের মুখে। গত বুধবার ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ-মিছিল ভণ্ডুল করে দিয়েছে ফ্রান্স ও গ্রিস। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।
জানা যায়, ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছাকাছি ইনভ্যালিডস চত্বরে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল ফিলিস্তিপন্থী কিছু সংগঠন। সেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া হচ্ছিল। ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছিলেন শান্তিপ্রিয় মানুষেরা।
কিন্তু বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় ফরাসি পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের তাড়িয়ে দেয়া হয় সেখান থেকে। জরিমানাও করা হয় অনেককে।
এক্ষেত্রে ফরাসিদের তুলনায় অনেকটা মারমুখী ছিল গ্রিক পুলিশ। তারা এথেন্সে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর গত কয়েকদিন ধরে টানা বোমাবর্ষণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষজন।
দেশে দেশ চলছে বর্বর এই হামলার প্রতিবাদ। অথচ ইউরোপের দেশগুলো ইসরায়েলের সমালোচনা মেনে নিতে একেবারেই নারাজ। বিশেষ করে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনে।
ডাচ ক্লাব আয়াক্সের দুই মুসলিম ফুটবলার নুসাইর মাজরাউই এবং জাকারিয়া লাবিয়াদ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি একটি শেয়ার করেছিলেন। কিন্তু তাতেই রেগে আগুন ক্লাবের ভক্তরা।
আয়াক্স ফ্যানসহ অনেক ইউরোপীয়ই এ দুই মরক্কোন ফুটবলারকে ক্লাব থেকে বহিষ্কারের দাবি জনিয়েছেন। ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট শেয়ার করায় একজন টুইট করেছেন, এরপর আয়াক্সে মাজরাউইর আর জায়গা থাকতে পারে না।
এ ফুটবলার অবশ্য ইউএফসি চ্যাম্পিয়ন খাবিব নুরমাগোমেদভের একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট শেয়ার করেছেন, যাতে লেখা ‘গাজার পক্ষে দাঁড়াতে আপনাকে মুসলিম হতে হবে না, মানুষ হলেই চলবে’। এ ধরনের চাপের মুখে ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে করা একটি টুইট ডিলিট করে দিয়েছে ইংলিশ ক্লাব ওয়েস্টহ্যাম।
গত ১২ মে স্কটিশ প্রিমিয়ারশিপ গেমে সেন্ট জনস্টনের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল সেল্টিক। সেখানে সেল্টিকের কিছু ‘ফ্যান’ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে হাজির হন। পরে গ্যালারির একটি অংশে ওই পতাকাগুলো টানিয়ে দেন তারা।
কিন্তু এটিকে ‘একেবারেই অগ্রহণযোগ্য’ দাবি করে দ্রুতই সেসব পতাকা সরিয়ে ফেলে সেল্টিক কর্তৃপক্ষ। এর জন্য একটি ‘ছোট গ্রুপ’ দায়ী বলে মন্তব্য করেছে স্কটিশ ক্লাবটি।
এক ফুটবল ফ্যান এর প্রতিবাদ জানিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘ক্লাব ফিলিস্তিনের পাশে না দাঁড়ালেও ফ্যানরা সবসময় পাশে রয়েছে’।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড
সাননিউজ/এএসএম