আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জেরুসালেমে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কট্টর ইহুদি এবং ইসরায়েলি পুলিশের সাথে ফিলিস্তিনিদের যে ছোটখাটো সংঘাত চলছিল সোমবার ১০ মে তা বিপজ্জনক এক লড়াইয়ের রূপ নিয়েছে।
সোমবার জেরুসালেমে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ঢুকে ইসরায়েলি পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেটে তিনশরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হওয়ার পর গাযা ভূখণ্ড থেকে সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েল দিকে রকেট ছোঁড়া শুরু করে ।
অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা এখনও অব্যাহত । এদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসও পাল্টা রকেট হামলা করে জবাব দিচ্ছে ইসরায়েলি হামলার ।
পাঁচদিন আগে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত হাজারের কাছাকাছি মানুষ হতাহত হয়েছেন। আর মৃত্যুর মিছিলে রাড়ছে লাশের সংখ্যা।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি? নতুন করে এই লড়াই-সহিংসতা বাধলোই বা কেনো? এ বিষয়ে বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা জেরেমি বোওয়েন তার বিশ্লেষণে জানান, দশকের পর দশক ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের মূলে যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলোর কোনো সমাধান এতদিনেও হয়নি বলেই আজও ঘুরে ফিরে এই সংঘাত বাঁধে।
তিনি বলেন, এবারের সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে জেরুসালেম। রোজার সময় পুলিশের বাড়াবাড়ি এবং আদালতের মাধ্যমে কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উৎখাতের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েই শুরু হয় নতুন দফার এই বিরোধ। পূর্ব জেরুসালেমের আরব অধ্যুষিত এলাকা শেখ জারাহ থেকে চারটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করার এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
শেখ জারায় যে জমির ওপর ঐ চারটি ফিলিস্তিনি পরিবার গত প্রায় ৭০ বছর ধরে বসবাস করছে, হঠাৎ তার মালিকানা দাবি করে কয়েকজন কট্টরপন্থী ইহুদি। জেরুসালেম নগর কর্তৃপক্ষ এবং শহরের একটি নিম্ন আদালত সেই দাবি মেনেও নেয়। বহুদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে ইসারায়েলি দক্ষিণপন্থীরা জেরুসালেম থেকে ছলেবলে তাদের উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর এবং শেখ জারাহ থেকে ঐ চারটি পরিবারকে বাড়িছাড়া করার সিদ্ধান্ত সেই ছকেরই অংশ।
এরইমধ্যে রোজার শুরুতে পুলিশ জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের ওপর কিছু বিধিনিষেধ বসালে পরিস্থিতির আরো ঘোলাটে হয়ে ওঠে। যেমন, বহুদিন ধরেই রোজার সময় পুরনো শহরের দামেস্ক গেটের চত্বরে সন্ধ্যায় জমা হয়ে ইফতার করে অনেক ফিলিস্তিনি। এবার ইসরায়েলি পুলিশ তা নিষিদ্ধ করে, যা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই সাথে যোগ হয় কট্টর ইহুদিদের ‘জেরুসালেম দিবস’ কুচকাওয়াজ নিয়ে উত্তেজনা।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশি অভিযান, তারপর সেই রাতেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে রকেট ছোঁড়া এবং গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর সংঘাত যে বিপজ্জনক চেহারা নিয়েছে, তা ২০১৮ সালের পর দেখা যায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, কয়েক বছর ধরে শান্তি আলোচনায় পুরোপুরি স্থবিরতা এবং কোভিড প্যানডেমিকের কারণে বহু মানুষ যে অর্থনৈতিক চাপে পড়েছেন সেটিও বহু মানুষের মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশা তৈরি করেছে যা এই সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে ।
সান নিউজ/আরএস