আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েল বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আর্টিলারি আর ট্যাঙ্ক হামলা চালাচ্ছে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ৩১ শিশুসহ অন্তত ১১৯ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
আহত হয়েছেন আরও ৮৩০ জনের বেশি। প্রতিনিয়ত গাজায় ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহতা যেমন বাড়ছে, তেমনি ধ্বংসস্তূপের ভেতর দাঁড়িয়ে বাড়ছে ফিলিস্তিনিদের হাহাকার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা শুক্রবারের প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, গাজা সীমান্তে মোতায়েন ইসরায়েলের সেনারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে আর্টিলারি ও ট্যাঙ্ক হামলা শুরুর পর গাজার উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিতে শুরু করে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো। ইসরায়েলি হামলায় বাড়িঘর হারিয়ে তাদের অনেকে যে যার মতো ছুটে পালাচ্ছেন।
ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। বৃহস্পতিবার ঈদের দিনেও অনেকের ঘুম ভেঙ্গেছে বোমা হামলার শব্দ শুনে। গত সোমবার থেকে ইসরায়েলের লাগাতার হামলার মধ্যে ধ্বংসস্তূপের ভেতর পবিত্র ঈদ উদ্যাপন করছেন ফিলিস্তিনিরা।
গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসও ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ছে। এছাড়া শুরু হয়েছে আরব-ইসরায়েলিদের মধ্যে দাঙ্গা।
ফিলিস্তিনি এক প্যারামেডিক উত্তরের গাজা উপত্যকার বিট লাহিয়ায় আল-তানানী পরিবারের একটি ধসে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে চাপা পড়া একটি লাশ বের করে আনার চেষ্টা করছেন।
হামাসের রকেট হামলায় অন্তত সাত জন ইসরায়েলি এবং ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, সোমবার থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে শত শত রকেট ছোড়া হয়েছে। তবে তার বেশিরভাগ প্রতিহত করতে পেরেছে তারা।
ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে ট্যাঙ্ক ও সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। এরমধ্যে গাজা সীমান্তে আরও ৯ হাজার সেনা সদস্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজায় বিমান হামলাও অব্যাহত রেখেছে।
সংঘাত বন্ধের আহ্বান সত্ত্বেও আজ শুক্রবার ইসরায়েল বিমান হামলা ও আর্টিলারি শেল দিয়ে গাজা উপত্যকাতে বোমাবর্ষণ করতে থাকে।
ইসরায়েলের বিমান-কামান হামলার সময় বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ভাই এবং তাদের জিনিসপত্র বহন করে একটি গাড়ি টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক ফিলিস্তিনি শিশু।
শরীফ আল-জহরনা (৩৩) গাজা শহরের শিফা হাসপাতালে রয়েছেন। গত ১০ মে জবালিয়া শহরে পাশের একটি বাড়িতে ইসরায়েলের হামলার কারণে আহত হওয়ার পর ক্ষত সারাতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাজা শহরের পূর্বের আল-শেজাইয়া পাড়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ধোঁয়া উঠছে। ইসরায়েলের হামলা থেকে বাঁচতে ফিলিস্তিনের পরিবারগুলো বৌত লাহিয়া শহরে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরে গাজা শহরে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে আশ্রয় নেয়।
ফিলিস্তিনি এক কিশোর গাজা শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলার পরে ধ্বংস হওয়া নিজের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের উপর বসে আছে।ফিলিস্তিনের বৌত লাহিয়া শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি শিশুর লাশ বের করে আনা হচ্ছে।
জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেসসহ আন্তর্জাতিক সব আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ‘ইসরায়েলে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনে’ এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভয়াবহ হামলার পর নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
সাননিউজ/এএসএম