আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার সকালেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে। পবিত্র আল-আকসা মসজিদে শবে-কদরের রাতে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালায়।
এর আগে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমে রকেট ছোড়ে। আল-আকসা থেকে সেনা সরানোর আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পরই ওই রকেট হামলা হয়। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালের এই হামলার আগে ইসরায়েলি সেনারা সোমবার রাতভর গাজা উপত্যকায় হামলা চালালে এ পর্যন্ত ২৬ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৯ শিশু রয়েছে। এরপর সকালে আবার সেখানে হামলা হয়। পশ্চিমা দেশগুলো দুই পক্ষকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালেও তুরস্ক ও সৌদিসহ কিছু দেশ ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
পূর্ব জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনের ওপর হামলা ও অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস আল-আকসা থেকে সেনা সরানোর জন্য ইসরায়েলকে আল্টিমেটাম দিয়েছিল।
কিন্তু ইসরায়েল তা না মানায় হামাস পূর্ব জেরুজালেমে হামলা শুরু করে। পরে ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রাখা গাজা উপত্যকায় বিমান দিয়ে বোমা হামলা শুরু করে। হামলায় সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
গতকাল সোমবার তৃতীয়দিনের মতো ইসরায়েলি পুলিশ আল-আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের এলাকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা শুরু করে। ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস দিয়ে পবিত্র রমজান মাসের শেষদিকে ইসরায়েলের এমন হামলার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করলে পুলিশ আরও চড়াও হয়। পরিস্থিতি সহিংস আকার নেয়।
এদিকে, একই দিন আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট অগ্নিশিখা এত বড় ও উজ্জ্বল ছিল যে, পূর্ব জেরুজালেমের শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা গেছে সেই আগুনের শিখা। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সহিংসতায় সাত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেক নারী-শিশু রয়েছে।
শনিবার জেরুসালেমের দামেস্ক গেটে যখন ইসলাম ধর্মের পবিত্র রাত লাইলাতুল কদর উপলক্ষে হাজার হাজার মুসলমান আল-আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করার সময় সহিংসতার শুরু। এদিন মসজিদ অভিমুখে মুসল্লিদের অনেক বাস আটকে দেয় ইসরায়েলি পুলিশ। হাজারো ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে ওইদিন গ্রেপ্তারও করা হয়।
সহিংসতার নেপথ্যে
১৯৬৭ সালে যুদ্ধের পর থেকে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। গোটা শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী বলে মনে করে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ তাতে স্বীকৃতি দেয়নি। ফিলিস্তিনিদের দাবি, পূর্ব জেরুজালেম হবে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী।
সেখানে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। কারণ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুজালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার শঙ্কা দিন দিন আরও জোরালো হচ্ছে। ফলে বাস্তুভিটা রক্ষায় নিজেদের সাধ্যমতো প্রতিরোধের চেষ্টা করছে ফিলিস্তিনিরা।
জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে, যেন যে কোনো ধরনের উচ্ছেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয় এবং ‘বিক্ষোভকারীদের প্রতি যেন সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানো হয়’। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে আরব দেশগুলোর জোট আরব লীগ। তারপরও ইসরায়েলের উচ্ছেদ অভিযান থেমে নেই।
সাননিউজ/এএসএম