আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে চীনের বৃহত্তম নভোযান লংমার্চ ফাইভ বির যে ধ্বংসাবশেষটি। সেটি ইতালির জনবহুল কোনো এলাকায় পড়বে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই শঙ্কা জানিয়েছেন।
ইতমধ্যে ইতালির উমব্রিয়া, লাজিও, আবরুজ্জো, মোলিসে, ক্যাম্পানিয়া, ব্যাসিলিকাটা, পুগলিয়া, কালাব্রিয়া, সিসিলি ও সার্ডিনিয়া— এই দশ অঞ্চলে সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
রোববার (৯ মে) দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে এই দশ অঞ্চলের যে কোনো একটিতে আছড়ে পড়তে পারে ধ্বংসাবশেষটি।
চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিকর্ষ শক্তির টানে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ওই ধ্বংসাবশেষটি আসলে লংমার্চ ফাইভ বির ১০০ ফুট লম্বা একটি অভ্যন্তরীণ অংশ, যার ওজন প্রায় এক টন।
ইতোমধ্যে ইতালির ওই ১০ অঞ্চলে বসবাসকারীদের ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশটির অপারেশনাল কমিটি অব সিভিল প্রটেকশন বিভাগের কার্যনির্বাহী কমিটি জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছে।
শুক্রবার কমিটির প্রধান ফ্যাব্রিজিও কুরকিও এই ১০ অঞ্চলের নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘ধ্বংসাবশেষটির আকার ও ওজন সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে এটি কোনো ভবনের ওপর পড়লে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হবে না, তবে যদি খোলা যায়গায় পড়ে, সেক্ষেত্রে যেন কারো জীবন সংশয় না দেখা দেয়, এ কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পৃথিবীর কক্ষপথে নিজেদের মহাকাশ স্টেশন স্থাপণের উদ্যোগ নিয়েছে চীন। সেই মহাকাশ স্টেশনের নামও ইতোমধ্যে ঠিক করা হয়েছে- তিয়ানহে মহাকাশ স্টেশন। সেই মহাকাশ স্টেশনের একটি মডিউল (অংশ) পরীক্ষামূলকভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করতে গত ২৮ এপ্রিল ওয়েনচ্যাং স্পেস সেন্টার থেকে ‘লংমার্চ ৫ বি’ নভোযানটি উৎক্ষেপণ করেছিল চীনের মহাকাশ সংস্থা।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যম স্পেসনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, নভোযানটি সফলভাবে মহাকাশ গবেষনা স্টেশনের মডিউলটিকে স্থাপনে সক্ষম হলেও নিজেকে আর গ্রাউন্ড স্টেশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি; ঘুরে চলেছে পৃথিবীর কক্ষপথে।
তবে সেটির অভ্যন্তরের একটি অংশ মূল নভোযান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিন কয়েকের মধ্যেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢুকে পড়তে চলেছে। রাডারে তা ধরাও পড়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নভোযানের ধবংসাবশেষটি এখন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে এবং এটি বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে ঢুকছে। যার মানে হল, এটি পৃথিবীর চারিদিকে বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে নীচের দিকে নেমে আসছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আরো বলা হয়েছে, ধ্বংসাবশেষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে সেটিকে গোলা ছুড়ে নীচে নামিয়ে আনার কোন পরিকল্পনা আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের নেই। এদিকে, নভোযানটির ধ্বংসাবশেষ জনবহুল অঞ্চলে বিধ্বস্ত হতে পারে বলে গত কয়েকদিন ধরে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে চীনের অন্যতম রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস।
দেশটির মহাকাশ বিশেষজ্ঞ সং ঝংপিংয়ের বরাত দিয়ে গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, চীনের স্পেস মনিটরিং নেটওয়ার্ক এ বিষয়ে নিবিড়ভাবে নজর রাখবে এবং কোথাও কোন ক্ষতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তবে শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াঙ ওয়েনবিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বিষয়টি উদ্বেগজনক, কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধ্বংসাবশেষটি যে জায়গায় পড়বে, সেখানে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম।’
২০২০ সালের মে মাসে চীনের আর একটি নভোযানে একই ঘটনা ঘটেছিল। সেবার পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্টে গ্রামীন এলাকায় আছড়ে পড়েছিল ওই নভোযানটির ধ্বংসাবশেষ।
বাতিল ওই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে মধ্যে ১২ মিটার (৩৯ ফুট) দীর্ঘ একটি ধাতব পাইপও ছিল। তবে ওই ঘটনায় কেউ নিহত বা আহত হননি।
সাননিউজ/এএসএম