আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে ভারত। ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে দেশটিতে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ। এদের বেশিরভাগই মারা যান হাসপাতালে। মর্গে জায়গা না থাকায় স্তূপিকৃত হচ্ছে একের পর এক মরদেহ।
আর এসব দৃশ্য দেখেই হতাশা আর মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন এক চিকিৎসক। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের রাজধানী দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালে।
এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমস জানিয়েছে, আত্মহত্যা করা ওই চিকিৎসকের নাম বিবেক রাই। তিনি রাজধানী দিল্লির একটি করোনা হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
দায়িত্বপালনের সময় চোখের সামনে করোনা রোগীদের একের পর এক মৃত্যু মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্থ করে তোলে তাকে। যার ফলে আহত্মহত্যার পথ বেছে নেন বিবেক রাই।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসক ডা. রবি ওয়াংখেড়েকার বলছেন, ‘বিবেক রাই একজন মেধাবী চিকিৎসক ছিলেন। করোনা মহামারির মধ্যে বহু রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা করেছেন।’
কিন্তু এরপরও কেন নিজের জীবনকে শেষ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিলেন ডা. বিবেক রাই? রবি ওয়াংখেড়েকারের কথায়, চোখের সামনে এত মানুষের মৃত্যু দেখতে দেখতেই ক্রমশ অবসাদে ডুবে যাচ্ছিলেন বিবেক রাই। শেষ পর্যন্ত আর সেই অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত এক মাস ধরে দিন-রাত কেবল করোনা রোগীদেরই চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন বিবেক রাই। দৈনিক সাত থেকে আটজন গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা করতে হচ্ছিল তাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে মারা গেছেন।
এমন পরিস্থিতি আর সহ্য করতে না বিবেক রাই আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলেই মনে করছেন তার সহকর্মীরাও। মানসিক চাপ আর আবেগকে তিনি সামলে রাখতে পারেননি বলেও মনে করছেন তারা।
এদিকে তরুণ চিকিৎসকের এই মর্মান্তিক পরিণতিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। অক্সিজেনসহ চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির মধ্যেই চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম করার কারণে বিবেক রাইয়ের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। ডা. রবি ওয়াংখেড়েকারের কথায়, ‘এটা হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছু নয়।’
উল্লেখ্য, মৃত বিবেক রাইয়ের স্ত্রী দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মৃত্যুর আগে বিবেক একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছেন বলেও জানিয়েছে দক্ষিণ দিল্লির মালব্যনগর থানার পুলিশ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। রোববার (২ মে) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৮৯ জন। একই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৮৮ জন।
ভাইরাসে আক্রান্ত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতে ব্যাপক হারে বাড়ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে সক্রিয় রোগী বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার। এর ফলে সেখানে এখন মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ ৫০ হাজার।
বিপুল সংখ্যক এই সক্রিয় রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া দেশটির চিকিৎসকদের জন্য রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাননিউজ/এএসএম