আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে অবশেষে হাসপাতালের পার্কিংলটে অপেক্ষমান গাড়িতে মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত এক নারী।
শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সীমান্তঘেঁষা উত্তরপ্রদেশের শহর নয়ডার গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস হাসপাতালে ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনা।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও আনন্দবাজার জানিয়েছে, মৃত ওই নারীর নাম জাগৃতি গুপ্ত (৩৫)। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার জাগৃতি গুপ্তের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে। চাকরিসূত্রে নয়ডায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। তার দুই সন্তান ও স্বামী থাকেন মধ্যপ্রদেশে।
সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হন জাগৃতি। যে বাসায় তিনি ভাড়া থাকতেন, সেই বাসার মালিক (বাড়িওয়ালা) তাকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তারপর তাকে গাড়িতে রেখে হাসপাতালে ভর্তি সংক্রান্ত নিয়মাবলী পূরণ করতে ছুটে যান ওই বাড়িওয়ালা।
শচীন নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘পার্কিং লটে গাড়ি রেখে বাড়িওয়ালা যখন সাহয্যের জন্য হাসপাতালে ছুটে গেলেন, সে সময় আমি তার (জাগৃতি গুপ্ত) পাশে ছিলাম। সাড়ে তিনটার দিকে তিনি মারা যান।’
‘মারা যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তার অবস্থা দেখতে একবার বাড়িওয়ালা এসেছিলেন। তারপর ফের হাসপাতালের রিসেপশনে গিয়ে বাড়িওয়ালা বলেন, ওই নারীর শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর ডাক্তাররা ওই গাড়ির কাছে আসেন এবং রোগীর অবস্থা পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
হাসপাতালের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে এখনও কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে উত্তরপ্রদেশের প্রায় সর্বত্রই একই চিত্র ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো।
ভারতের বেশকিছু সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি এমন পৌঁছেছে, শয্যা এবং অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতাল থেকে রোগী বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবার পরিজনরা।
উত্তরপ্রদেশের রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ অবশ্য জানিয়েছে, রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন এবং আইসিইউ শয্যা মিলিয়ে এই মুহূর্তে মোট ২ হাজার ৫৬৮টি শয্যা খালি রয়েছে। বুকিংয়ের জন্য একটি আপৎকালীন নম্বরও দিয়েছে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ।
কিন্তু একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে ওই নম্বরে ফোন করা হলে বলা হয়, নয়ডা এবং গ্রেটার নয়ডার কোথাও কোনো শয্যা খালি নেই। কতক্ষণ পর শয্যা পাওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে বলা হয়, পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রায় এক সপ্তাহ ৩ লক্ষের উপরে ঘোরাফেরার পর এই মুহূর্তে দেশে দৈনিক করোনা সংক্রমণ ৪ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নয়ডায় এই মুহূর্তে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ২০০। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২১২ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার
সাননিউজ/এএসএম