আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এপ্রিল মাসের শুরুতে বাংলাদেশের আকাশে ঘন মিথেন গ্যাসের রহস্যজনক ধোঁয়ার উপস্থিতির খবর আসে বিশ্ব গণমাধ্যমে। প্যারিসভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছিল।
এ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হলেও সেসময় এর উৎস শনাক্ত করা যায়নি। অবশেষে সেই উৎসও শনাক্ত করেছে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশন।
পর্যবেক্ষক এই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার মাতুয়াইল ময়লার ভাগাড়। সেখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় চার হাজার কেজি মিথেন গ্যাস নিঃসরিত হচ্ছে।
গত ২৫ এপ্রিল জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের বরাত দিয়ে প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদটিতে উল্লেখ করা হয়, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কোনো এক অংশ থেকে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখা গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম মিথেন গ্যাসের বিপুল পরিমাণ নিঃসরণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ রাজধানী ঢাকারই কোনো একটি অংশ থেকে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে।
মিথেন একটি বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাস। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী গ্যাস মিথেনকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে।
কারণ পৃথিবীতে আসা সূর্যের তাপ ধরে রাখার মাধ্যমে গ্যাসটি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া মিথেন এতটাই ক্ষতিকর যে, গত দুই দশকে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বায়ুমণ্ডলের ৮৪ গুণ বেশি ক্ষতি করেছে গ্যাসটি।
জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের প্রেসিডেন্ট স্টেফানি জার্মেইন জানিয়েছেন, গত ১৭ এপ্রিল তাদের হুগো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল বা ময়লার ভাগাড় থেকে বিপুল পরিমাণ মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হতে দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ধারণা, এর পরিমাণ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় চার হাজার কেজি হতে পারে।
আরও স্পষ্ট ভাবে বললে, ১ লাখ ৯০ হাজার গাড়ি প্রতি ঘণ্টায় পৃথিবীর বায়ুকে যতোটা দূষিত করে, ঠিক সেই একই পরিমাণ দূষণ ছড়াচ্ছে মাতুয়াইলের এই ময়লার ভাগাড়টি।
বিষয়টি অবশ্য তদন্ত করে দেখার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
এর আগে এপ্রিলের শুরুতে বাংলাদেশের ওপর মিথেন গ্যাসের ধোঁয়া শনাক্তের কথা জানিয়ে সেসময় স্টেফানি জার্মেইন বলেছিলেন, আমরা আজ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী টেকসই মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ দেখতে পেয়েছি। তবে আমরা এর উৎস পরিষ্কারভাবে শনাক্ত করতে পারিনি।
এর মাত্র দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেনের নিঃসরণের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে রাজধানী ঢাকার মাতুয়াইল ময়লার ভাগাড়কে চিহ্নিত করল প্রতিষ্ঠানটি। জিএইচজিস্যাট অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের মিথেন নিঃসরণ নিয়ে কাজ করলেও এই প্রথমবারের মতো তারা নির্দিষ্ট কোনো জায়গাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হলো।
এদিকে ব্লুমবার্গের প্রশ্নের জবাবে মাতুয়াইল পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে সমস্যার মাত্রা নির্ধারণের জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়টি।
মন্ত্রণালয় বলেছে, মাতুয়াইল ময়লার ভাগাড় এলাকা থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা খতিয়ে দেখা এবং তা কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া বলছেন, মাতুয়াইল ময়লার ভাগাড়টি ১৮১ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এবং সেখানে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য ফেলা হয়। এর মধ্যে জাপানের অর্থায়নে তরল বর্জ্য এবং গ্রিনহাউস গ্যাস ব্যবস্থাপনার কাজ করা হলেও সেখান থেকে কী পরিমাণ মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য নেই।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
সাননিউজ/এএসএম