সান নিউজ ডেস্ক : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত যুক্তরাজ্যে উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে বাংলাদেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি চলছে। সেরামের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক এ প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের ৩ কোটি ডোড টিকা পাওয়ার কথা।
কিন্তু ভারতের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির পর সেরামের ওই টিকা পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে আছে। গত বছরের ডিসেম্বরে হওয়া চুক্তি মোতাবেক প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু এ পর্যন্ত দুই কিস্তিতে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশে করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া প্রত্যেকে দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের হাইকমিশন গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি কূটনৈতিক বার্তা দিয়েছে; যেখানে ভারত-বায়োটেক নামে দেশটির স্থানীয় একটি ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি টিকা কোভ্যাক্সিন দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশেই তৈরি করার আগ্রহের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে কতটা আগ্রহী সে সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।
কূটনৈতিক বার্তায় বলা হয়েছে, গত বছর থেকে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য নিরাপদ ও সহজলভ্য টিকা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। বাংলাদেশের জনগণের টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া এর প্রতিফলন। এর পাশাপাশি আইসিডিডিআরবি ও ভারত বায়োটেক গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কোভ্যাক্সিনের ফেজ থ্রির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চুক্তি করেছিল। তবে সেই ট্রায়াল শুরুর অনুমোদন এখনও পাওয়া যায়নি। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ডের তুলনায় কোভ্যাক্সিন বেশি কার্যকর, প্রায় ৮০ শতাংশ।
বার্তায় আরও বলা হয়েছে, আমাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে ও বেশ কয়েকটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে যদি কোভ্যাক্সিনের যৌথ উৎপাদন শুরু হতো, তবে আমাদের দেশে ও অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে তৈরি) ভ্যাকসিন সরবরাহ করা যেত। এতে প্রত্যেক বাংলাদেশি গর্বিত হতো। তবে সেই সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এখনও আমাদের সেই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করার পথ খোলা আছে।
কোন পরিস্থিতিতে এ বার্তা দিলো ভারত : ভারত এমন এক সময় এ বার্তা দিল যখন দেশটিতে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশটিতে টিকার চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক আকারে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা না মিটিয়ে টিকা রফতানির বিরোধিতা রয়েছে ভারতে। একইসঙ্গে টিকা সরবরাহে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে বার্তায় টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল স্বল্পতার কথাও বলা হয়েছে। তবে কাঁচামাল নিয়ে সঙ্কট কেটে গেলে বাংলাদেশ ভারতে তৈরি কোভিশিল্ড টিকাই পাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বার্তায়।
এ ছাড়াও অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা পাওয়া নিয়ে সন্দেহের মধ্যে বাংলাদেশ টিকার অন্য উৎসের দিকেও তাকাতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ফর্মুলা গোপন রাখার শর্তে দেশেই করোনা ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক-৫’ উৎপাদনে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে দেশটি থেকে কিছু ভ্যাকসিন নগদ অর্থে ক্রয়ও করবে বাংলাদেশ সরকার।
একইসঙ্গে চীনে তৈরি টিকা নিয়েও আলাপ-আলোচনা এগিয়ে চলেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে ভ্যাকসিন আনা নিয়ে কথা চলছে। প্রাথমিকভাবে চীন বাংলাদেশকে কিছু ভ্যাকসিন ফ্রি দেবে, সংখ্যাটা ৫-৬ লাখের মতো হবে।
কোভ্যাক্সিন কীভাবে কাজ করে? : টিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্বের এক নেতৃস্থানীয় দেশ ভারত। তাদের ছয়টি বড় আকারের টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আছে যা পৃথিবীর ৬০ শতাংশ টিকা উৎপাদন করে। ভারত বায়োটেক নামে ২৪ বছরের পুরোনো টিকা উৎপাদনকারী এই কোম্পানি উদ্ভাবন করেছে কোভ্যাক্সিন।
কোভ্যক্সিন টিকাটি তৈরি হয়েছে মৃত করোনাভাইরাস দিয়ে, যাকে বলে ‘ইনএ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন।’ এটি নিরাপদে ইনজেকশন আকারে মানুষের শরীরে দেওয়া যায়। এটা মানবদেহে ইনজেকশন আকারে দেয়া হলে - রোগপ্রতিরোধী দেহকোষগুলো তখনও মৃত করোনাভাইরাসটিকে চিনতে পারে এবং দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তোলে। তখন ভাইরাসটির বিরুদ্ধে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে থাকে।
কোভিশিল্ডের মতো কোভ্যাক্সিন টিকারও দুটি ডোজ নিতে হয়, চার সপ্তাহের ব্যবধানে। ভ্যাক্সিনটি সংরক্ষণ করতে হয় ২ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
সান নিউজ/এসএম