আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি সময়ে সীমান্ত, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যে দেশটির সঙ্গে ভারতের চরম বিবাদ চলছে, সেই চীন এবার করোনায় ক্ষতবিক্ষত ভারতকে বন্ধু হিসেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আগ্রহ জানিয়েছে। চীনের ভারতীয় দূতাবাসে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে যোাগযোগও করেছে জিনপিং প্রশাসন।
গত শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লি জিয়ান এক বার্তায় বলেন, ‘ভারতের মহামারি পরিস্থিতি ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছেছে। আমরা প্রতিবেশী দেশের দুঃসময়ে পাশে আছি। আমরা সমব্যথী।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীন সরকার এবং চীনের নাগরিকরা এই লড়াইয়ে ভারত সরকারের পাশে আছে। মহামারি মোকাবিলায় ভারতের যা যা প্রয়োজন তা আমরা দিতে প্রস্তুত। নয়াদিল্লির সঙ্গে কথাও হচ্ছে আমাদের। আমরা আশাবাদী, ভারতীয়রা দ্রুত এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতবেন।’
দিল্লির সরকারী সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতবারই চীনে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দেশটির সরকার। দেশটিতে সাম্প্রতিক উচ্চ সংক্রমণ রুখতে ভারতের কী কী সহযোগিতা প্রয়োজন জানতে চেয়েছে চীনের সরকার।
ভারতে গত প্রায় দেড় মাসধরে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে শীর্ষে আছে ভারত। শুক্রবার ভারতজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ জন এবং এই দিন এ রোগে মারা গেছেন ২৬২১ জন।
গত বছর বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এই পরিসংখ্যান ভারতে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভারতের রেকর্ড। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত তিন সপ্তাহে ভারতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ১০ লাখে (৯ লাখ ৯৪ হাজার)।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী সার্স-কোভ-২ ভাইরাস, যা বিশ্বে সাধারণভাবে পরিচিতি পায় করোনাভাইরাস নামে। এই ভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত হয়ে যিনি মারা গিয়েছিলেন, তিনি উহানের নিবাসী ছিলেন। শনাক্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাসটি।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৪ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ২৯৯ জন এবং এ রোগে মারা গেছেন মোট ৩০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪১ জন।
এদিকে গত বছর ভারতের জম্মু ও কাশ্মির প্রদেশের পূর্ব লাদাখ সীমান্তে দুই দেশের সেনা সদস্যদের সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর পর ভারত-চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়। ভারতে নিষিদ্ধ হয় চীনের পণ্যসামগ্রী, মোবাইল অ্যাপ। এরপর দুই দেশের সেনা পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনা, দশ রাউন্ড বৈঠকের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা সরানোর বিষয়ে একমত হয় উভয়পক্ষ। এরই মধ্যে খারাপ সময়ে ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে এল চীন।
সান নিউজ/এসএম