আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: কল্পনা করুন তো এমন একটি গ্রামের কথা- যেখানে ঘরবাড়িতে নেই কোনও দরজা, দোকানপাটে লাগানো হয় না তালা; এমনকি ব্যাংকে পর্যন্ত তালা নেই। অথচ গ্রামটির বাসিন্দারা কখনো অনিরাপদও বোধ করেন না।
হয়তো ভাবতে পারেন- এমন গ্রাম শুধু কল্পনাতেই থাকে। বাস্তবে তা অদৃশ্য। কিন্তু আপনার ভাবনা ভুল। বাস্তবেই এমন গ্রামের অস্তিত্ব আছে। ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের শনি শিঙ্গনাপুর এমনই এক গ্রাম।
এই গ্রামের বাসিন্দারা হিন্দু দেবতা শনির ভক্ত। তাকেই তারা গ্রামটির রক্ষাকর্তা মনে করে।
শানি শিঙ্গনাপুর গ্রামের মানুষের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে পুরনো এক ইতিহাস। যদিও এই ইতিহাসের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। প্রায় ৩০০ বছর আগে গ্রামটিতে একবার প্রচণ্ড বৃষ্টি ও বন্যা হয়।
বন্যা শেষ হলে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পানশালা নদীর তীর থেকে উদ্ধার হয় বিশালাকৃতির কালো রঙের একটি শিলাখণ্ড।
সেই শিলাখণ্ডকে এক রাখাল তার হাতের লাঠি দিয়ে আঘাত করতেই অঝোর ধারায় রক্ত বেরোতে শুরু করে। ফলে গ্রামের সব মানুষ ভয়ে দিশেহারা হয়ে এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করলো।
পরের রাতে গ্রামবাসীর স্বপ্নে দেখা দেয় শনি দেবতা। সবাইকে সে জানায়, ওই শিলাখণ্ড মূলত তারই প্রতিমূর্তি। যদি তারা একে সঠিকভাবে উপাসনা করে তাহলে সবার মুক্তি ও নিরাপত্তা দেবেন ঈশ্বর। নইলে এই রক্তের ধারা বন্ধ হবে না।
শনি তার উপাসনার জন্য দুটি শর্ত জুড়ে দেন। প্রথমত, এই গ্রামের কোনও জায়গায় পবিত্র মূর্তিটিকে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, গ্রামের কেউ তাদের ঘরের দরজা কখনোই বন্ধ করতে পারবে না।
এরপর থেকেই নাকি শনি শিঙ্গনাপুর গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর ও দোকানপাটের দরজা কখনোই বন্ধ করেন না। আর সেই রীতিই চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। গ্রামটির এই প্রথা দেখতে সেখানে প্রতিদিন ভিড় করেন ৪০ হাজার পর্যটক।
২০১০ সালে একবার এক পর্যটক জানান, গ্রামটি থেকে তার ৩৫ হাজার রুপি চুরি হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে আরেকজন জানান যে গ্রামটি ভ্রমণের সময় তার ৭০ হাজার রুটি মূল্যের স্বর্ণের গয়না হারিয়েছে।
২০১১ সালে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংক শনি শিঙ্গনাপুর গ্রামে শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন গ্রামবাসীর সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আলোচনার করে স্থির করে যে ব্যাংকের দরজা থাকবে স্বচ্ছ কাঁচের। আর দরজায় থাকবে না কোনও তালা।
সাননিউজ/এএসএম