আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কোয়েটার একটি চার তারকা হোটেলের পার্কিং লটে গাড়িবোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং আরও ডজনখানেক আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, যে হোটেলটিতে হামলা হয়েছে সেখানে চীনা রাষ্ট্রদূত ও তার সঙ্গীরা অবস্থান করছিলেন। এদিন তাদের লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমদ নিশ্চিত করেছেন, কোয়েটার বিলাসবহুল হোটেলটিতে চীনা প্রতিনিধিরা অবস্থান করছিলেন। তবে বোমা বিস্ফোরণের সময় তারা সেখানে ছিলেন না।
প্রাদেশিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়াউল্লাহ লাঙ্গো জানিয়েছেন, চীনা রাষ্ট্রদূত পুরোপুরি সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নাসির মালিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বুধবার রাতে সেরেনা হোটেলের পার্কিংয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় একটি হাসপাতালের কর্মকর্তা ওয়াসিম বেগ জানিয়েছেন, হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, হামলায় মোট পাঁচজন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন।
রশিদ আহমদ স্থানীয় টিভি চ্যানেল এআরওয়াই নিউজকে বলেন, হোটেলে বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হয়।
পাকিস্তানি তালেবান এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) এক মুখপাত্র রয়টার্স প্রতিনিধির কাছে পাঠানো ক্ষুদেবার্তায় বলেছেন, এটি আত্মঘাতী হামলা ছিল। এতে হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি ব্যবহার করেছে।
প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র লিয়াকত শাহওয়ানি এক টুইটে জানিয়েছেন, হামলার কিছু আগে চীনা রাষ্ট্রদূত নং রং প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী জাম কামালের সঙ্গে কোয়েটাতেই দেখা করেছিলেন। এদিকে, পাকিস্তানের হোটেলে এ বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন। তবে এ ঘটনায় কোনও চীনা নাগরিক হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তারা।
জনপ্রিয় ও অত্যন্ত সুরক্ষিত সেরেনা হোটেলটি ইরানি কনস্যুলেট এবং প্রাদেশিক পার্লামেন্ট ভবনের কাছেই অবস্থিত। ইরান ও আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী বালোচিস্তান প্রদেশে প্রায়ই স্থানীয় জাতীয়তাবাদীদের ছোটখাটো বিদ্রোহ দেখা যায়। তারা স্থানীয় খনিজ সম্পদের আরও বেশি অংশ দাবি করে থাকে।
অবশ্য পাকিস্তানে আগেও বিলাসবহুল হোটেলে এ ধরনের হামলা হয়েছে।
২০১৯ সালের মে মাসে গোয়াদার এলাকায় পাঁচ তারকা পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেলে বন্দুক ও বোমা হামলা হয়েছিল। এতে অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারান, আহত হন আরও কয়েকজন। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি।
তারও আগে ২০০৮ সালে ইসলামাবাদে পাঁচ তারকা ম্যারিয়ট হোটেলে হামলায় অন্তত ৬০ জন নিহত হন। এক্ষেত্রে প্রায় ৬০০ গ্রাম উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে হোটেলের গেটে হামলে পড়ে আত্মঘাতী হামলাকারী। এতে হোটেলটির একটি অংশ ধসে পড়ে, যার কারণে সেটি কয়েক মাস বন্ধ ছিল।
এর পরের বছরই পেশোয়ারে পাঁচ তারকা পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেলে বন্দুক ও আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় অন্তত নয়জন নিহত হন। এতে পাঁচতলা ভবনটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স, ডন
সাননিউজ/এএসএম