আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) তিনি এই ঘোষণা দেন। এদিকে বাইডেনের এই ঘোষণাকে নিজেদের বিজয় ও যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় হিসেবে দাবি করেছে তালেবান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেন তালেবানের সিনিয়র নেতা হাজী হেকমত।
তালেবানের সিনিয়র এই নেতা গত শতকের ৯০-এর দশকে সশস্ত্র ওই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। সেসময় তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমানে তিনি বালখ জেলার তালেবানের ছায়া মেয়র। বালখ জেলা ছিল আফগানিস্তানের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল এলাকাগুলোর একটি।
আর বর্তমানে এটি সবচেয়ে সহিংস এলাকাগুলোর অন্যতম।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তার দেশের সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আর এটাকে যুদ্ধে নিজেদের বিজয় হিসেবে বিশ্বাস করে তালেবান।
তালেবান নেতা হাজী হেকমত বিবিসি’কে বলেন,‘আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করেছি এবং যুক্তরাষ্ট্র পরাজিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকল কিছুর জন্যই প্রস্তুত আছি। আমরা শান্তির জন্যও প্রস্তুত আছি, একইসঙ্গে যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত আছি।’
তালেবান গোষ্ঠী একইসঙ্গে একদিকে আফগান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং অন্যদিকে মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলে এর পরের পরিস্থিতি ঠিক কী হবে?
হাজী হেকমতের ভাষায়, ‘আমরা এমন একটি সরকার চাই, যেটা ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী চলবে। এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই অব্যাহত রাখবো।’
আফগানিস্তানের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তালেবান ক্ষমতার ভাগাভাগিতে যাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হেকমত বলেন, কাতারে অবস্থানরত তালেবানের রাজনৈতিক নেতারা এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটাই মেনে নেবো।
তালেবানরা নিজেদেকে এখন আর বিদ্রোহী বলে মনে করে না। নিজেদেরকে তারা ‘সরকার গঠনে অপেক্ষমান’ (গভার্নমেন্ট-ইন-ওয়েটিং) বলে মনে করে থাকে। নিজেদেরকে পরিচয় দিতে গিয়ে তারা ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান’ কথাটি উল্লেখ করে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০০১ সালে মার্কিন বাহিনীর হামলায় ক্ষমতা হারানোর আগপর্যন্ত তারা এই নামটিই ব্যবহার করতো।
আর এখন এই গোষ্ঠীটি একটি ছায়া সরকার কাঠামো পরিচালনা করছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সবকিছু দেখভালের জন্য নিয়মমাফিক সরকারের মতো তাদেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছে।
বারইয়ালাই নামে তালেবানের একজন সামরিক কমান্ডার একটি রাস্তার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই রাস্তা ধরে সামনে এগোলে প্রধান যে বাজারটি আসবে, সেখানেই আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী রয়েছে। কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবে না। কারণ এই পুরো এলাকাটি আমাদের।’
অবশ্য আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকারই দৃশ্য এটি। আফগান সরকার কেবল বড় বড় শহর এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। আর শহরের বাইরে বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি বাহিনীর সদস্যদের ঘিরে রয়েছে তালেবানের যোদ্ধারা।
শুধু তাই নয়, তালেবান গোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব চেক পোস্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থা। আফগানিস্তানের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে তাদের চেকপোস্ট ছড়িয়ে রয়েছে। তেমনই বালখ জেলার একটি চেকপোস্টে যাতায়াত করা সকল গাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন তালেবান যোদ্ধারা।
তালেবানের স্থানীয় গোয়েন্দা প্রধান আমির সাহিব আজমল বিবিসি’কে বলেন, ‘আফগান সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদেরই আমরা খুঁজছি। আমরা তাদেরকে আটক করবো এবং (তালেবান পরিচালিত) আদালতের কাছে হস্তান্তর করবো। এরপর আদালতই ঠিক করবে- তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে।
সূত্র: বিবিসি
সাননিউজ/এএসএম