সাননিউজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বয়স মাত্র ১৪ বছর। কিন্তু কম বয়সি বলে কী চারিদিক হিংসা, বিক্ষোভ, নৃশংসতা দেখে চুপ থাকা যায়? গণতন্ত্রের সমর্থনে তাই গান গেয়েছিলেন মিয়ানমারের কিশোরী পান-এই-ফু। আর পাঁচটা প্রাপ্তবয়স্ক চিন্তাশীল মানুষের মতোই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন তিনি। তবে পার পেলেন না। ‘দেশদ্রোহিতা’ করায় গুলিতে ঝাঁঝরা হতে হল তাঁকে।
না, এই ঘটনা আজকের ঘটনা নয়। এই ঘটনা গত ২৭ মার্চের। মিয়ানমার অভ্যুত্থানের সব থেকে অন্ধকারতম দিন ছিল সেটি। একদিনেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ১০ জন ছিল নাবালক-নাবালিকা-সহ ১১৪ জন। সেই তালিকাতেই নাম ছিল পান-এই-ফু’র। নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের পর মিয়ানমার জুড়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ইন্টারনেট পরিষেবা। কুলুপ এঁটে দেয়া হয়েছিল সংবাদমাধ্যমের মুখেও। তবে কতদিন সত্যিকে আটকে রাখা যায় এভাবে? সম্প্রতি প্রকাশ্যে মিয়ানমার প্রশাসনের বর্বরতম ঘটনার কথা।
২৭ তারিখের সেই ভয়াবহ হত্যকাণ্ডের কয়েকদিন আগের কথা। টিকটকে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক গণতন্ত্রপন্থী গান গেয়ে পোস্ট করেছিলেন পান-এই-ফু। তাতে সাড়াও পড়েছিল বেশ ভালো মতোই। অভ্যুত্থান-বিরোধী বিক্ষোভে কোথাও যেন স্ফুলিঙ্গ সংযোজন করে দিয়েছিল তাঁর গানগুলি। ফলত, আগে থেকেই পুলিশের নজরে ছিলেন তিনি।
আর এই কথা মাথায় রেখেই ২৭ মার্চ তাঁকে বাড়ির বাইরে বেরতে দেননি তাঁর মা। শুধুমাত্র সুরক্ষার কথা ভেবেই। অথচ তাঁর পূর্ণ ইচ্ছে ছিল রাস্তায় নেমে সামিল হওয়া গণ-আন্দোলনে। কিন্তু তখন কে-ই বা জানত বাড়িতে এসে তাঁকে খুন করে যাবে স্বৈরাচারী শাসকের ‘সন্ত্রাসদল’!
সকাল পর্যন্তও সেদিন শান্তই ছিল বাইরের পরিস্থিতি। শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল প্রতিবাদ। তবে বেলা গড়াতেই রক্তক্ষয়ী মোড় নেয় অবস্থান। বিক্ষোভকারীদের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে পুলিশের গুলি। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কিছু দেহ। কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে দৌড় লাগান উদ্দেশ্যহীনভাবে। এমন সময়ই বেজে উঠেছিল কলিং বেল। কোনো কিছু না ভাবেই আন্দোলনদের আশ্রয় দেয়ার জন্য দরজা খুলতে দৌড়ে যান পান-এই-ফু। না, কোনো আশ্রয়পার্থী ছিলেন না প্রবেশদ্বারে। সেদিন দরজায় কড়া নেড়েছিলেন স্বয়ং শাসকের জল্লাদরা।
দরজা বন্ধ করে বাড়িতে ঢুকে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বার্মার কিশোরীটি। পিছন থেকে গুলি চালায় বার্মিজ সেনা। শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন তাঁর মা। মেঝেতে পড়ে থাকা মেয়ের দেহ দেখে প্রথমে অনুমান করেছিলেন হয়তো পা পিছলেই পড়ে গিয়েছেন তিনি। তারপর খেয়াল হয় বইছে রক্তের ধারা। শেষ হয়ে গেছে সবকিছু।
এই ভয়ঙ্করতম দৃশ্যের ট্রমা কাটিয়ে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেননি তার মা থিডা সান। ইয়াঙ্গুনের মতো শহরে বছর দশেকের পুত্র সন্তানকে নিয়ে থাকাটাই এখন দায় হয়ে উঠেছে তার। প্রতি মুহুর্তেই যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে মৃত্যুর ভয়।
বিগত দু’মাসে মিয়ানমারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ৭০০-র বেশি মানুষের। প্রাণ গেছে ৫০-এর বেশি নাবালক-নাবালিকার। তবুও বিন্দুমাত্র অপরাধ নেই জান্তার মধ্যে। সমাজের প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবীদের জন্য ঘোষিত হয়েছে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা। ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তারও হয়েছেন কেউ কেউ। তবে এক সন্তানকে হারানোর পরেও থিডা মনে করছেন, অভ্যুত্থান শেষ না হওয়ার পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত রাখা দরকার। নাহলে মৃত্যু হবে গণতন্ত্রের।
সাননিউজ/টিএস/এসএম