আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারে ক্ষমতা দখলের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে। সাংবাদিকসহ আটক হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি। এর মধ্যে গত শনিবার এক দিনেই নৃশংসতা চালিয়ে অন্তত ১৪১ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে নিরাপত্তা বাহিনী। এরপরও দমে যাননি গণতন্ত্রকামীরা।
বিক্ষোভকারীদের বরাত দিয়ে চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানাচ্ছে, চলতি সপ্তাহের সহিংসতার পর গণতন্ত্রকামীরা আরও প্রত্যয়ী হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আরকান আর্মি, কারেনসহ একাধিক সংগঠন জোট বেঁধেছে সেনা সরকার উৎখাতে।
এদিকে শনিবারের ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। ওয়াশিংটন মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতেরেস জান্তা সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববাসীর প্রতি।
বিবিসি জানিয়েছে, গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীরা সোমবার রাতে প্রদীপ জ্বেলে নিহতদের স্মরণ করেছেন। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ )শুরু হয়েছে তাদের নতুন এক কর্মসূচি গার্বেজ স্ট্রাইক। এ কর্মসূচিতে নাগরিকরা ঘরের আবর্জনা রাস্তার মোড়ে ছুড়ে ফেলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
এ্যাসিস্ট্যান্স এ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) নামের একটি সংগঠন বলছে, সোমবারও বিক্ষোভে দমন-পীড়নে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ জন নিহত হয়েছেন ইয়াঙ্গুনের দাক্ষিণ দাগন এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা সেই এলাকায় বালির বস্তা দিয়ে অবরোধ তৈরি করেছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনী তা সরাতে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। স্থানীয় এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেছেন, রাতেও সেখানে গোলাগুলির শব্দ পেয়েছেন তারা। সে কারণে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এ বিষয়ে পুলিশ বা সেনা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে পারেনি সংবাদ সংস্থাটি।
এএপিপি’র হিসাবে গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে দুই মাসে কমপক্ষে ৫১০ জনের মৃত্যু হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে গত শনিবার, সব মিলিয়ে ১৪১ জন নিহত হয়েছেন সেদিন।
মিয়ানমারজুড়ে এই বিক্ষোভের পেছনের অন্যতম সংগঠন জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিজ (জিএসসিএন) ফেইসবুকে পোস্ট করা এক খোলা চিঠিতে সেনাশাসনের বিরোধিতাকারী জনগণ, তরুণ, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশটিতে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন জাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীর সহযোগিতা চেয়েছে।
তাদের আহ্বানে সাড়াও মিলছে। ৩টি সশস্ত্র গ্রুপ মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীকে হত্যা বন্ধ করে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স আর্মি, আরাকান আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছে সেনাবাহিনী এই আহ্বানে সাড়া না দিলে তারাও মিয়ানমারের সর্বজাতির আত্মরক্ষার বসন্ত বিপ্লবে শামিল হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটির বিস্তৃত অংশ দুই ডজন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে; গত কয়েক দিনে সেই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের তীব্রতাও বেড়েছে।
সান নিউজ/এসএ