আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চরম উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বৈশাখ শুরুর আগে চৈত্রের তাপদহ তুচ্ছ করে সব উত্তাপ ছাপিয়ে গেছে রাজনৈতিক মাঠে।
শনিবার ( ২৭ মার্চ ) প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় কেন্দ্রে ভোটারদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়েছে। প্রথম ধাপের ভোটেই বিজেপির বিরুদ্ধে ইভিএমে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের মধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে গিয়ে ভোটের রাজনীতি করছেন। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের দায়ে তার ভিসা বাতিল হওয়া উচিত।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ৩০ আসনে শনিবার ভোট গ্রহণ হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের সময় নির্ধারিত থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে কোথাও কোথাও প্রায় এক ঘণ্টা বেশি সময় ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার ৩০টি আসনে ১৯১ প্রার্থী এ ধাপে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন।
নির্বিঘ্ন ভোট গ্রহণের জন্য মোট ১১ হাজার বুথে ৬৫৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের ২০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট দিতে ভোটারদের উৎসাহিত করেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
প্রথম দফার ভোট ভালো হয়েছে বলে দাবি করেন তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেন, প্রথম দফায় যে ৩০টি বিধানসভা আসনে ভোট হলো, তার মধ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে ১০টি আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল, ২০টিতে বিজেপি। বিভিন্ন জায়গা থেকে যে খবর আসছে, তাতে পুরো পরিস্থিতি অন্য রকম লাগছে। প্রথম দফায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসবে।
অবশ্য এই ৩০টি আসনের মধ্যে ২০১৬ সালের বিধাসনভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ২৬টি আসন। যেখানে বিজেপির আসন ছিল না বলেই চলে। তবে এবার বিজেপি এই ৩০টির মধ্যে বেশির ভাগ আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। শনিবার ভোট গ্রহণের সময় সন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিজেপির প্রতিনিধিদল।
বিজেপির সর্বভারতী সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, 'প্রথম দফার ভোট গ্রহণের রিগিং (কারচুপি) অনেক কম হয়েছে। ৯০ শতাংশ বুথে নির্বিঘ্নে ভোট হয়েছে। সেজন্য আমরা কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
এদিকে কেশিয়াড়িতে দাঁদরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা গ্রামবাসীর বাড়িতে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিতে বলেছেন। পশ্চিম মেদেনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
দাঁতন বিধানসভা আসনের মোহনপুরের পাড়ূইয়ের ১৪৮ নম্বর বুথের কাছে এ সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এ ঘটনায় দুই পক্ষের চারজন আহত হন।
অন্যদিকে শনিবার মমতার সঙ্গে এক বিজেপির কর্মীর ফোনালাপ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় রাজনৈতিক মহলে। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহসভাপতি প্রলয় পালের দাবি, তাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ফোন করেছিলেন। তাকে তৃণমূলে ফিরে আসার অনুরোধ করেন তিনি। ভোটে দলকে সহযোগিতা করতে বলেন মমতা।
এ নিয়ে মাঠ গরম করে তোলে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, মমতা হেরে যাবেন বুঝেই বিজেপি কর্মীর কাছে মিনতি করেছেন। যদিও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ওই ফোনালাপ সত্য হলে তাতে দোষের কিছু নেই। কারণ, প্রলয় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাকে দলে ফেরানোর চেষ্টা তো দোষের কিছু নয়।
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন চলার মধ্যে বাংলাদেশ সফরে এসে মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেখা করায় প্রধানমন্ত্রী মোদির কঠোর সমালোচনা করেছেন মমতা। মোদির বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন তিনি। শনিবার খড়গপুরে নির্বাচন প্রচারের সময় তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে যাবেন হুমকি দিয়েছেন মমতা। বিষয়টি ভারতীয় গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে।
মমতা বলেন, '২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যখন এক বাংলাদেশি অভিনেতা (ফেরদৌস) আমাদের র্যালিতে যোগ দেন, তখন বিজেপি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলে তার ভিসা বাতিল করে। এখন এখানে নির্বাচনের সময়, আপনি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে এক শ্রেণির মানুষের মানুষের কাছে ভোট চাইছেন। আপনার ভিসা কেন বাতিল করা হবে না? আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করব।'
মূলত নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি মন্দিরে পূজা দেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করে এসব অভিযোগ তোলেন। ওড়াকান্দি মতুয়া সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি আসনে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটাররা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
মমতার অভিযোগ, 'তারা প্রায়ই বলে থাকে মমতা বাংলাদেশ থেকে মানুষ নিয়ে এসেছে, অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। তবে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এখন নিজেই ভোট মার্কেটিং করতে বাংলাদেশে চলে গেছেন।'
সান নিউজ/এসএ