আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের প্রায় দুই ডজন দেশ ব্রিটেনের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রয়োগ স্থগিত করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা নেওয়ার পর শরীরে ‘গুরুতর রক্ত জমাট বাধার’ তীব্র আশঙ্কার মাঝে দেশগুলো ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ সাময়িক স্থগিত করেছে।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার সঙ্গে রক্ত জমাট বাধার কোনও সম্পর্ক নেই। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাধতে পারে। একই সঙ্গে দেশগুলোকে এই টিকার প্রয়োগ অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানিয়েছে বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা স্থগিত করেছে; তাদের বেশিরভাগই ইউরোপের। সর্বশেষ সোমবার জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স এবং স্পেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে একই পথে হেঁটেছে আয়ারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং নেদারল্যান্ডসও। এছাড়াও আরও কিছু দেশ করোনার এই টিকা প্রদান স্থগিত করছে।
ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভ্যাকসিন নেওয়া এক কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষের ডাটা পর্যালোচনার পর এই তথ্য জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপীয় মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই ভ্যাকসিনটির সুরক্ষার ব্যাপারে আস্থা রাখতে বলেছে। ইএমএর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে ভ্যাকসিন নেওয়া প্রায় ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে গত ১০ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৩০ জনের শরীরে রক্ত জমাট বাধার তথ্য পাওয়া গেছে।
যে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইএমএর আশ্বাসে মানুষ খুব বেশি আস্থা রাখতে পারছে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক এখন পর্যন্ত কোন কোন দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ স্থগিত করেছে।
ফ্রান্স : দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এই টিকার প্রয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। ইউরোপীয় মেডিসিন্স এজেন্সি মঙ্গলবার সকালের দিকে ভ্যাকসিনটির সুরক্ষার ব্যাপারে নিজেদের মতামত প্রকাশ করার পর সেটি আবারও প্রয়োগ শুরু হবে কিনা সেব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ফ্রান্স।
এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যাক্রোঁ বলেছেন, পূর্ব-সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জার্মানি : জার্মান সরকার বলছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর বিপজ্জনকভাবে রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার নতুন খবর পাওয়ার কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার ব্যবহার স্থগিত করা হয়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, জার্মানির জাতীয় ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য পল এরলিচ ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী— পূর্ব-সতর্কতা হিসেবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সংস্থাটি করোনা টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার ঘটনায় অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
ইতালি : দেশটির ওষুধ সংস্থা এআইএফএ বলছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ডের টিকাপ্রয়োগ স্থগিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তারাও এই ভ্যাকসিন স্থগিত করেছে।
এআইএফএ ভ্যাকসিনটির এক ডোজ ব্যবহারে বিধি-নিষেধ আরোপ করার কয়েকদিন পর পূর্ব-সতর্কতা হিসেবে টিকাদান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় ইতালি। যদিও সংস্থাটি বলছে, ভ্যাকসিনটির এখনও তেমন কোনও কড়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পায়নি তারা।
স্পেন : তিনি বলেন, পূর্ব সতর্কতা হিসেবে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য আমরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ব্যবহার স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পর্তুগাল : ইউরোপের এই দেশটিও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার প্রয়োগ সাময়িক স্থগিত করছে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ডিজিএসের প্রধান গ্রাসা ফ্রেইটাস বলেছেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক হলেও এ ধরনের ঘটনা একেবারে বিরল।
তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর পর্তুগালে এখন পর্যন্ত রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার কোনও খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্লোভেনিয়া : দেশটির সরকার বলছে, রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার ব্যবহার স্থগিত করেছে।
তিনি বলেছেন, টিকা প্রয়োগ স্থগিতের ন্যায্যতার পক্ষ্যে কোনও মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ মতামত নেই। তবে ইউরোপীয় মেডিসিন্স এজেন্সির মতামতের ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া : রোববার ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইউরোপের কিছু গ্রহীতার শরীরে রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার খবরে ইন্দোনেশিয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম পিছিয়ে দেবে।
মন্ত্রী বুডি গুনাডি সাদিকিন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার প্রয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখবে।
বিশ্বের সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে গঠিত কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতায় ইন্দোনেশিয়া চলতি মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে। আগামী দুই মাসে দেশটি আরও এক কোটি ডোজ টিকা পাবে।
নেদারল্যান্ডস : সোমবার দেশটির সরকার এই টিকার প্রয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার আগে ডাচ স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর ১০ জনের শরীরে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
দ্য ফার্মাকোভিজিল্যান্স সেন্টার লারেব বলেছে, টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও কারও রক্তে প্ল্যাটিলেট কমে যায়নি; যা দেখা গেছে ডেনমার্ক এবং নরওয়েতে।
আয়ারল্যান্ড : নরওয়েতে কিছু গ্রহীতার শরীরে রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার খবরে ১৪ মার্চ অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার প্রয়োগ স্থগিত করেছে আয়ারল্যান্ড।
ইউরোপীয় মেডিসিন্স এজেন্সির কাছ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে এই টিকা আর ব্যবহার করা হবে না বলে জানিয়েছে আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন অ্যাডভাইসরি কমিটি (এনআইএসি)।
বুলগেরিয়া : ৫৭ বছর বয়সী এক নারী ভ্যাকসিন নেওয়ার পরপরই মারা যাওয়ায় গত ১২ মার্চ অ্যাস্ট্রাজেনেকোর টিকার প্রয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দেয় বুলগেরিয়া।
যদিও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ওই নারী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানা যায়। এছাড়া তার শরীরে রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার কোনও আলামতও পায়নি দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো (ডিআরসি) : ইউরোপীয় দেশগুলোর নেওয়া সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে গত ১২ মার্চ আফ্রিকার এই দেশটিও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রয়োগ স্থগিত করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে গঠিত কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতায় গত ২ মার্চ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৭ লাখ টিকা পেয়েছে ডিআরসি। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই টিকার প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়নি।
থাইল্যান্ড : ইউরোপের বাইরে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে গত ১২ মার্চ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম পিছিয়ে দেয় থাইল্যান্ড। ওইদিন দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার কথা ছিল।
তবে এই স্থগিতাদেশ ছিল সাময়িক। মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা প্রথম ব্যক্তি হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন।
রোমানিয়া : গত ১১ মার্চ রোমানিয়া সাময়িকভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচের ব্যবহার স্থগিত করে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সরকারের এই পদক্ষেপকে চরম সাবধানতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আইসল্যান্ড : ইউরোপীয় মেডিসিন্স এজেন্সির তদন্তের ফল না পাওয়া পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে আইসল্যান্ড। গত ১১ মার্চ দেশটি এই টিকার প্রয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানায়।
ডেনমার্ক : ১১ মার্চ ডেনমার্ক অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পরবর্তী দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেয়। ইউরোপে করোনার এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার খবরে এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি।
দেশটির ওষুধ সংস্থা দ্য ড্যানিশ মেডিসিন্স এজেন্সি পরবর্তীতে জানায়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর রক্ত জমাট বেধে ৬০ বছর বয়সী এক নারী মারা গেছেন। তার শরীরে উচ্চমাত্রার অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। এছাড়া ওই নারীর শরীরে রক্তের প্ল্যাটিলেটের সংখ্যাও বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।
নরওয়ে : গত ১১ মার্চ দেশটি অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রয়োগ স্থগিতের ঘোষণা দেয়। ১৩ মার্চ দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর দেশটির তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী— যাদের প্রত্যেকের বয়স ৫০ বছরের নিচে; সম্প্রতি তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই স্বাস্থ্য কর্মীদের শরীর থেকে রক্তপাত, রক্ত জমাট বেধে যাওয়া এবং রক্তে প্ল্যাটিলেটের পরিমাণ একেবারে কমে যায়।
তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণেই তারা অসুস্থ হয়েছেন কি না তা এখনও জানা যায়নি।
ভেনেজুয়েলা : সোমবার ভেনেজুয়েলা বলেছে, তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেবে না। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ বলেছেন, রোগীদের শরীরে ভ্যাকসিনটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভেনেজুয়েলা ইতোমধ্যে রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ এবং চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে।
অস্ট্রিয়া : ডেনমার্ক এবং নরওয়ের টিকাদান স্থগিতের আগেই গত ৭ মার্চ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রয়োগ স্থগিত করে অস্ট্রিয়া। এছাড়াও অস্ট্রিয়ার কাছে থেকে নেওয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার স্থগিত করেছে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লুক্সেমবার্গ।
টিকাদান অব্যাহত রাখার আহ্বান ডব্লিউএইচওর : অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। টিকা গ্রহীতাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধাসহ সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগের কারণে ইউরোপের বেশ কয়েকটি বড় বড় দেশ টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার প্রেক্ষিতে এই আহ্বান জানাল সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র ভ্যাকসিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা অ্যস্ট্রাজেনেকার টিকার বিষয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বৈঠকে বসছেন। টিকা ইস্যুতে একইদিন বৈঠকে বসছে ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সিও (ইএমএ)। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংস্থাটি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার বিষয়ে হয়তো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।
এর আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার সঙ্গে টিকা গ্রহীতার শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির কোনো ইঙ্গিত নেই বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইএমএ জানায়, টিকা নেওয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এমনকি এটা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও তালিকাভুক্ত করা হয়নি।’
যা বলছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা : এক বিবৃতিতে এই টিকার প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি বলেছে, তাদের টিকার সাথে রক্ত জমাটের ঝুঁকি বাড়ার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তারা বলছে, ইউরোপে এক কোটি ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৩৭টির মত রক্ত জমাটের ঘটনা ঘটেছে এবং যারা এই টিকা নেননি তারাও একই সময়ে সমান সংখ্যায় রক্ত জমাটের শিকার হয়েছেন।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা অ্যান টেইল বিবিসিকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ ইতোমধ্যে আমাদের টিকা নিয়েছেন। এমনিতেই শত শত মানুষ স্বাভাবিক সময়েই রক্ত জমাটের শিকার হন। সেই তুলনায় টিকা নেওয়া মানুষদের মধ্যে রক্ত জমাটের সংখ্যা অনেক অনেক কম।’
তিনি বলেন, ‘মহামারিতে বিচ্ছিন্ন প্রতিটি ঘটনার ওপর এখন নজর অনেক বেশি এবং মানুষের নিরাপত্তার জন্য অনুমোদিত টিকার প্রতিক্রিয়ার ওপরও স্বাভাবিক। প্রচলিত নজরদারির চেয়ে অনেক বেশি নজরদারি হচ্ছে।’
করোনাভাইরাস মহামারির তাণ্ডব ঠেকিয়ে বিশ্বজুড়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে ইতিহাসের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের করোনা ট্র্যাকার বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১২৬টি দেশের ৩৮ কোটি ১০ লাখ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে।