আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের সামরিক জান্তার গুলিতে প্রতিদিনই রক্তাক্ত হচ্ছে রাজপথ। লাশের মিছিলের মধ্যেও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সেনা বাহিনীর অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলকে কোনভাবেই ছাড় দেবে না গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সচেতন মানুষ। অজ্ঞাত স্থান থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বিক্ষোভকারীদের।
শনিবার (১৩ মার্চ ) পুলিশের গুলিতে সেখানে কমপক্ষে ১২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। এ অবস্থাকে জাতির সবচেয়ে কালো সময় আখ্যায়িত করেছেন আত্মগোপনে থাকা বেসামরিক এক নেতা মান উইন খাইং থান।
তিনি বলেছেন, এই অন্ধকার কেটে নতুন ভোর খুব আসন্ন। তাই তিনি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিপ্লব অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। অভ্যুত্থানের পর দেওয়া প্রথম ভাষণে এ কথা বলেছেন তিনি। আত্মগোপনে থেকে পার্লামেন্টের একদল সদস্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তারা কেউই গত মাসের সামরিক অভ্যুত্থানকে মেনে নেবেন না।
একের পর এক লাশ পড়ার ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্ব সামরিক জান্তার ওপর চাপ প্রয়োগে তৎপর হয়েছে। প্রতিদিন রাজপথের বিক্ষোভের গতি বাড়ছে। প্রতিদিন রাজপথ থাকছে বিক্ষোভকারীদের দখলে। এ অবস্থায় ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির যেসব এমপি গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছেন তারা নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন।
এর নাম দেয়া হয়েছে কমিটি ফর রিপ্রেজেন্টেটিং পিডাউংসু হ্লুত্থাও (সিআরপিএইচ)। এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছে মান উইন খাইং থান’কে। মিয়ানমারের যথার্থ সরকার হিসেবে এই গ্রুপটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করছে। এ অবস্থায় ফেসবুকে দেওয়া ভাষণে মান উইন খাইং থান বলেছেন, অন্ধকার সময়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এখন সময় পরীক্ষা দেয়ার।
একটি ফেডারেল গণতন্ত্র, যেখানে সব জাতির ভাইয়েরা থাকবেন, যারা দশকের পর দশক ধরে স্বৈরাচারের নানা রকম নিষ্পেষণে ভুগছেন, সেই গণতন্ত্র গড়ে তুলতে এই বিপ্লবই হলো একটি সুযোগ। এ সময়ে আমরা একত্রিতভাবে আমাদের প্রচেষ্টা নিতে পারি। অতীতে আমাদের মত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, এখনকার সময়ে স্বৈরাচারকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানাতে আমাদেরকে একত্রে হাত মেলানো জরুরি।
তবে সেনাবাহিনী সিআরপিএইটকে একটি বেআইনি গ্রুপ হিসেবে দেখে থাকে। সামরিক জান্তা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, এই গ্রুপটিকে যারাই সহযোগিতা করবে তাদের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হবে। নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে সামরিক জান্তা যে জালিয়াতির অভিযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা সেই দাবির বিরোধিতা করেছেন।
তারা বলেছেন, মিয়ানমারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে কোনও অনিয়ম হয়নি। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে অং সান সুচির বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ৬ লাখ ডলার এবং ১১ কেজি স্বর্ণ গ্রহণের অভিযোগ এনেছে সামরিক জান্তা। তবে কোনও প্রমাণ দেওয়া হয়নি। সামরিক জান্তার এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এনএলডির একজন আইনপ্রণেতা।
১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করে গ্রেফতার করা হয়। তারপর গত ৫ সপ্তাহে তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তা জানায়নি সেনারা। তবে এরই মধ্যে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে তাকে আদালতে হাজির দেখানো হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে রেডিও সরঞ্জাম রাখা, করোনা ভাইরাসের বিধিনিষেধ ভঙ্গ করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই বিক্ষোভকারীদের দমিয়ে দিতে সেনাবাহিনী সহিংসভাবে শক্তি ব্যবহার করছে। এতে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। অভ্যুত্থানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মিয়ানমার সরকারের যে ১০০ কোটি ডলারের তহবিল আছে যুক্তরাষ্ট্রে তা সেনাবাহিনীর জন্য ব্লক করে দেয়া হয়েছে। তবে কৃতকর্মের সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে সামরিক জান্তা। উল্টো তারা অং সান সুচিকে সহিংসতার জন্য দায়ী করছে।
সান নিউজ/এসএ