আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সরকারের প্রতিহিংসা চরিতার্থের লক্ষ্যে ভিন্ন দল, মতের লোকজনের ওপর প্রতিশোধ, শাস্তি অথবা ক্ষতি করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে ভীতিহীন পরিবেশে জনগণের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা চর্চা করার সক্ষমতা থাকা উচিত।
সরকারের নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্যে ভিন্ন দল-মতাবলম্বী, মুক্তমনা লেখক, মত প্রকাশকারী ও সাংবাদিকদের টার্গেট করে নির্যাতন, হত্যা, মামলা-হামলা করে হয়রানি করা কখনও সহ্য করবে না যুক্তরাষ্ট্র।
একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত এমন সব মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও সরকারের একই রকম কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার বিষয়ে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিনকেন।
তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটের ভিতরে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি আরও বলেছেন, নিজের বিশ্বাস সম্পর্কে মত প্রকাশের কারণে জীবন দিয়েছেন জামাল খাসোগি।
তার মৃত্যুর দ্বিতীয় বার্ষিকীতে গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, খাসোগির মৃত্যু বৃথা যেতে দেয়া হবে না। তার স্মৃতিকে স্মরণ করে আরও মুক্ত পৃথিবীর জন্য লড়াই করতে হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া এই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেছেন, এরই মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসে এই হত্যাকাণ্ডে বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন বাইডেন-কমলা প্রশাসন।
এতে তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জবাবদিহিতা দাবি করেছেন। রিপোর্ট প্রকাশের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, বিশ্বজুড়ে এই অপরাধের যে নিন্দা জানানো হয়েছে তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি পদক্ষেপ ঘোষণা করছে। একই সঙ্গে যেসব সরকার সাংবাদিকদের এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার চর্চার জন্য হুমকি বা আক্রমণ করতে সীমা অতিক্রম করে তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলছে।
এ্যান্টনি ব্লিনকেন আরও বলেন, এর প্রেক্ষিতে আমি নতুন একটি ভিসা বিধিনিষেধ খাসোগি ব্যান আরোপ করছি। যেসব ব্যক্তি বিদেশে নিজের সরকারের পক্ষে কাজ করছে, সরাসরি ভয়াবহ ও অন্য দেশের ভিন্ন মতাবলম্বীর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কাজ করছে, এমনকি যারা সাংবাদিক, অধিকারকর্মী অথবা সেইসব ব্যক্তি যাদেরকে তাদের কাজের কারণে ভিন্ন মতাবলম্বী মনে হতে পারে।
তাদের ওপর যারা নিষ্পেষণ চালায়, হয়রানী করে, নজরদারি করে, হুমকি দেয় অথবা ক্ষতি করে, অথবা যেসব মানুষ এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে অথবা তাদের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছে, তাদের প্রতি এই রকম নিষ্পেষণ চালায় তাদের বিরুদ্ধে এই ভিসায় কড়াকড়ি আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এমন কর্মকাণ্ড যারা চালায় তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও এই ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হবে। তিনি আরও বলেন, শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সৌদি আরবের ৭৬ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে খাসোগি ব্যান আরোপ করছে। বিদেশে অবস্থানকারী ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার সঙ্গে যুক্ত তারা। তারা শুধু খাসোগি হত্যার সঙ্গেই যুক্ত নন। তাদের পরিবারের বিরুদ্ধেও একই রকম ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। কোনও ভিন্ন মতাবলম্বীকে টার্গেট করা কাউকে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পৌঁছতে দিতে পারি না।
এমন বিষয়ে আমাদের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে উল্লেখ করেছি। যদি কোনও দেশের সরকার কোনও ব্যক্তি বিশেষকে তার মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার চর্চার কারণে টার্গেট করে, হতে পারে সেটা নিজের দেশের ভিতর বা দেশের বাইরে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখবে অব্যাহতভাবে।
যুক্তরাষ্ট্র যখন সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃনির্মাণ করছে তখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন পরিষ্কার করেছেন যে, অংশীদারিত্বের মধ্যে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন প্রতিফলিত হতে হবে। তাই শেষ পর্যায়ে আমরা বলতে চাই অধিকারকর্মী, ভিন্ন মতাবলম্বী এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের হুমকি ও অবমাননা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এসব যুক্তরাষ্ট্র সহ্য করবে না।
সান নিউজ/এসএ