আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন। অত্যাধুনিক চিপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ফাইভ-জিতে আগামীতে দ্বিগুণ বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথে হাঁটছে দেশটি। খবর ব্লুমবার্গ।
শনিবার ( ৬ মার্চ) চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পেশ করে চীন। এতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং ডিএনএ ব্যাংকের মতো নবীন খাতগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে বেশ উচ্চাভিলাষী কিন্তু বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ঘোষণা করে তারা।
শুক্রবার ( ৫ মার্চ) বেইজিংয়ে ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী কেকিয়াং বলেন, চীনের আধুনিকায়ন প্রচেষ্টায় উদ্ভাবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে রেখেছে। চীনের উন্নয়নে কৌশলগত সহায়তায় আমরা আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি।
উচ্চ প্রযুক্তির সেমিকন্ডাক্টর, অপারেটিং সিস্টেমস, কম্পিউটার প্রসেসর এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে দ্বিগুণ বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। এ খাতগুলোতে এরই মধ্যে বেশ শক্তিশালী অবস্থান করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের ৫৬ শতাংশ এলাকা ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনাও রয়েছে বেইজিংয়ের। দেশব্যাপী গবেষণা ও উন্নয়নে (আরএন্ডডি) আগামী ৫ বছরে বার্ষিক ব্যয় ৭ শতাংশ করে বাড়ানো হচ্ছে। মহামারীর মধ্যে সেমিকন্ডাক্টরের ঘাটতির বিষয়টি মাথায় রেখে কম্পিউটার চিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি উপাদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাচ্ছে চীন।
হাইড্রোজেন চালিত গাড়ি থেকে শুরু করে বায়োটেকের মতো খাতে মনোযোগ বাড়াচ্ছে এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি। ইন্টেল ও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৃতীয় প্রজন্মের চিপ নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। টেকনো-অটোক্রেসির বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের বিপরীতে নিজেদের সমরকৌশল সাজাচ্ছে চীন।
হুয়াওয়ে, বাইটডান্স ও টেনসেন্টের মতো চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টের সঙ্গে লেনদেনে কালো তালিকাভুক্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি ডলারের চিপ আমদানি করে থাকে চীন। কিন্তু গত বছরের মতো বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বেশ সংকটের মুখে পড়তে হবে তাদের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে স্ব-চালিত গাড়ি প্রযুক্তিতে বাইরের সাপ্লাই চেইনের ওপর নির্ভরশীলতা যে দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে, গত বছর তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইনের সফটওয়্যারের জন্য ক্যাডেন্স ডিজাইন সিস্টেমস ও সিনোপসিসের মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে নিজস্ব সফটওয়ার নির্মাণের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে গত শুক্রবারের পরিকল্পনায়।
এছাড়া নিজস্ব উন্নতমানের চিপ ম্যানুফ্যাকচারিং প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছে চীন। সিলিকন কার্বাইড এবং গ্যালিয়াম নাইট্রাইড নির্মিত চিপের মতো অগ্রসর প্রযুক্তিতে দৃষ্টি রাখছে তারা। এ চিপ হাই ফ্রিকোয়েন্সি ও উচ্চ বিদ্যুৎ ও তাপমাত্রার পরিবেশে কাজ করতে পারে। বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে শুরু করে মিলিটারি গ্রেডের রাডার তৈরিতে এ চিপ ব্যবহৃত হবে।
অগ্রসর এ প্রযুক্তি এগিয়ে নিতে জাতীয় পর্যায়ের গবেষণাগার ও উদ্ভাবন কেন্দ্র তৈরি করবে চীন। সাই-টেক ইনোভেশন ২০৩০ এজেন্ডা নামে রোডম্যাপে বিদেশ থেকে মেধা আকর্ষণের পরিকল্পনাও করছে বেইজিং। প্রযুক্তি অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সিলিকন ভ্যালি ও তাইওয়ানের মতো সেমিকন্ডাক্টর হটবেড থেকে মেধাবীদের টোপ ফেলবে তারা।
বড় প্রযুক্তি জায়ান্টদের সঙ্গে চীন সরকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত শেয়ার করতে বাধ্য থাকবে আলিবাবা ও টেনসেন্টের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো। বৈশ্বিকভাবে এরই মধ্যে এন্টি-ট্রাস্ট তদারকিতে চাপের মুখে থাকা চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো আরও সমালোচনার মুখে পড়বে।
সান নিউজ/এসএ