আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে ওই হত্যকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আভাস দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। ভবিষ্যতে প্রয়োজন মনে হলে সৌদি যুবরাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এ বিষয়ে রিয়াদ কোনো মন্তব্য না করলেও সৌদি যুবরাজের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন খাশোগির বাগদত্তা হাতিজে চেঙ্গিস।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর আবারো আলোচনায় সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড। গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদেন হত্যাকাণ্ডে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সংশ্লিষ্টতার কথা প্রথম প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই সৌদি আরবের সাবেক এক কর্মকর্তা ও রাজকীয় একটি বাহিনীর ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দেশটির ৭৬ নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। তবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় জো বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে চলছে সমালোচনা।
এমন বাস্তবতায় সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞার আভাস দিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
স্থানীয় সময় সোমবার নিয়মিত বিফ্রিংয়ে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই রিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, অবশ্যই সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আর সেগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সময় এবং প্রয়োজন বুঝে এসব বাস্তবায়ন করা হবে। যেসব দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। খুব প্রয়োজন না হলে সেসব দেশের নেতৃত্বের ওপর আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করি না। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সৌদি যুবরাজের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
তবে ভিন্ন সুরে কথা বলেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার উল্লেখ করে ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরও জোরদারের কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস।
তিনি বলেন, এটা ঠিক ২৮ মাস আগে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একই সাথে সৌদি আরবের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় দেশটির সাথে আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করা উচিত। আমরা সেটা করে যাচ্ছি। মধ্যপ্রাচ্যের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োগে দেশটির সাথে নতুন করে সম্পর্ক জোরদার করা হবে।
হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তার প্রমাণ পাওয়ার পরও সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে তা চরম উদ্বেগ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ জানায়, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। শুধু কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে হবে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ নতুন যুগের সূচনা করতে চেয়েছিলেন। এখন এসব বিষয়ে তিনি নীরব থাকলে সেটি দুঃখজনক।
এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ নিয়ে মুখ খুলেছেন সাংবাদিক জামাল খাশোগির বাগদত্তা হাতিজে চেঙ্গিস। এক টুইট বার্তায় মোহম্মদ বিন সালমানকে দ্রুত শাস্তি দেওয়ার' দাবি জানান তিনি।
হাতিজে চেঙ্গিজ বলেন, যদি যুবরাজকে শাস্তি দেওয়া না হয় তবে সবার সামনে আজীবনের জন্য এটা একটি দৃষ্টান্ত হয়ে যাবে যে, হত্যার পর মূলহোতা শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারেন। যা সবার জন্য বিপদজনক হবে আর এটা মানবতার ও পর কলঙ্ক পড়বে।
সৌদি আরবের নির্বাসিত সাংবাদিক খাশোগিকে ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়।
সান নিউজ/এসএম