আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাজ্যসভায় বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে আচমকা তৃণমূ কংগ্রেস ছাড়ার ঘোষণা দিলেন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। একইসঙ্গে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন।
সাবেক এই বিজেপি নেতাকে তৃণমূল কংগ্রেসে এনেছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। দিয়েছিলেন মন্ত্রিত্বও। সেই দীনেশ ত্রিবেদী ‘দমবন্ধ হয়ে আসছে’ বলে দল ত্যাগ করায় হতবাক সতীর্থরা। শুক্রবার রাজ্যসভায় বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে তার এ ঘোষণা ছিল খুবই নাটকীয়তাপূর্ণ। গুঞ্জন উঠেছে তিনি হয়তো বিজেপিতেই ফিরে যাবেন।
রাজ্যসভায় দীনেশ বলেন, ‘আমার রাজ্যের সর্বত্র হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। অথচ আমরা কিছু বলতে পারছি না। আমি রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির ভূমি থেকে আসা মানুষ। তাই এটা আমি আর দেখতে পারছি না। আমি একটি দলে আছি। তাই দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হচ্ছে। কিন্তু আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। এর চেয়ে ইস্তফা দিয়ে বাংলায় গিয়ে কাজ করা ভাল।’’
তিনি আরও বলেন, আমি আমার অন্তরের ডাক শুনেছি। সকলকেই কখনও না কখনও অন্তরাত্মার ডাক শুনতে হয়। আমি তৃণমূল ছাড়ছি। তবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
একদা ভিপি সিংহের ঘনিষ্ঠ এই বর্ষীয়ান নেতা তৃণমূলে থাকাকালীন দেশের রেলমন্ত্রী হন। কিন্তু রেলের ভাড়া বাড়ানোয় তার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মমতা। কারণ, রেল বাজেট পেশ করতে গিয়ে দীনেশ বলেছিলেন, ‘রেল আইসিইউতে চলে গিয়েছে।’ ঘটনাচক্রে, দীনেশের অব্যবহিত আগে রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা। দীনেশের ওই বক্তব্যের পর রাতারাতি তাকে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এদিকে দীনেশের ঘোষণা শুনে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান বলেন, এ ভাবে ইস্তফা দেয়া যায় না। এর একটি পদ্ধতি আছে। আপনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত ভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিন।
দীনেমের দলত্যাগের ঘটনায় চমকিত তৃণমূল। যদিও সংসদে দীনেশের সতীর্থ প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, উনি ছেড়ে দেয়ায় আমরা দুঃখিত। দীনেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিভিন্ন আলোচনায় তিনি আমাকে সে কথা বলেছিলেন। দিল্লির কিছু নেতাকেও বলেছিলেন। তবে উনি যে এ ভাবে দল ছেড়ে দেবেন, সেটা সম্পর্কে কোনও ধারনা আমাদের ছিল না।’ বস্তুত, দীনেশ নিজেও কোনো পরিচিত মহলেই দল ছাড়ার বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেননি। তবে তৃণমূলে থেকে যে তিনি সন্তুষ্ট নন, তা ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বৃহস্পতিবারই দীনেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি টুইটকে ‘রিটুইট’ করেছিলেন। যা থেকে তার বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা জোরাল হচ্ছে। গত লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের হয়ে লড়ে হেরে গিয়েছিলেন। জিতেছিলেন অর্জুন সিংহ, যার সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিতে তার পুরনো দ্বন্দ্ব। অর্জুন অবশ্য দীনেশের তৃণমূল ত্যাগের কথা শুনে প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দীনেশ ২০১৪ সালে ব্যারাকপুর আসন থেকে জিতেছিলেন। ২০১৯ সালে ওই আসনের দাবি করেন অর্জুন। দড়ি টানাটানিতে মমতা দীনেশকেই প্রাধান্য দেন। টিকিট না পেয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান অর্জুন। এবং তৃণমূলের দীনেশকে হারিয়ে জিতে যান। তার পর অবশ্য মমতা দীনেশকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসেন।
সান নিউজ/আরআই