আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তরাখণ্ডে তুষার ধস হওয়ার ঘটনা ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ১৭০জন। তাছাড়া ৩১ জনের লাশও উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) যখন হালকা বান আসে তখন রাজেশ কুমার নামের এক শ্রমিক ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি টানেলের ৩শ' মিটার ভিতরে কাজ করছিলেন। বন্যার পানি যখন টানেলের মধ্যে ঢোকে তখনও তারা সেখানেই ছিলেন।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বছর আঠাশের রাজেশ বলছিলেন, 'আমরা ভাবতেও পারিনি কিছু করতে পারব। হঠাৎ আমরা একটা হুইসিলের আওয়াজ শুনি। বাইরে তখন চিৎকার হচ্ছিল। সবাই আমাদের বেরিয়ে আসতে বলছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম আগুন লেগেছে। আমরা দৌঁড়তে শুরু করি। কিন্তু পানি তীব্র বেগে তখন টানেলে ঢুকে পড়েছে। ঠিক যেন হলিউডের সিনেমার মতো।'
তারা টানেলের মধ্যে উঁচু করে বাঁধা রড আঁকড়ে ধরেন। প্রায় চার ঘণ্টা এমন চলে। মাথা পানির উপরে বের করে কোনওক্রমে শ্বাস নিচ্ছিলেন সবাই। প্রত্যেকে প্রত্যেককে সাহায্যের চেষ্টা করছিলেন। রাজেশ বলেন, 'আমরা সবাই সবাইকে বলছিলাম, যাই হয়ে যাক, আমদের রড ছাড়লে চলবে না। ভগবানকে ধন্যবাদ আমাদের হাত ফসকে যায়নি।'
বন্য়ার পানি উপত্যকায় নেমে যাওয়ার পর টানেলে পানি কমতে শুরু করে। কিন্তু ধ্বংসাবশেষ ও কাদা প্রায় ১.৫ মিটার ঢেকে দেয়। রাজেশ বলেন, 'আমরা ধ্বংসাবশেষের উপর দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি। কোনওক্রমে টানেলের মুখে পৌঁছানো আমাদের লক্ষ্য ছিল।' তারা এরপর একটি ছোট ছিদ্র দেখতে পান। সেখান দিয়ে বাতাস আসছিল। প্রত্যেকেই তা বুঝতে পারছিলেন। এরপর তারা আলো দেখতে পান। একজনের ফোনে টাওয়ারও পাওয়া যায়। সময় নষ্ট না করে তারা সাহায্য চান।
ওই ছোট্ট গর্তের মাধ্যমেই সেদিন রাজেশ ও তার সহকর্মীদের বের করেন উদ্ধারকারীরা। অভিশপ্ত ওই টানেল থেকে বেরিয়ে এক এক জনের প্রতিক্রিয়া ছিল এক এক রকম। কেউ শূন্যে ঘুসি ছুঁড়ে আনন্দ ব্যক্ত করছিলেন, কাউকে আবার সোজা স্ট্রেচারে করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অতক্ষণ বন্দি থাকার পর অনেকেরই অল্প আঘাত ছাড়া তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।
সান নিউজ/এসএস