আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্টিল কনটেইনার পাওয়ার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আর এ প্রতিযোগিতার অর্থ হলো থাইল্যান্ড বিশ্ববাজারে চাল পাঠাতে পারছে না, কানাডায় মটর ডাল আটকে রয়েছে এবং রফতানি করতে না পারায় ভারতে চিনির পর্বত আকার ধারণ করেছে। খালি বাক্সগুলো চীনে ফেরত পাঠানো এতটাই লাভজনক হয়ে উঠেছে যে কিছু মার্কিন সয়াবিন শিপিং সংস্থাও কনটেইনারের অভাবে এশীয় ক্রেতাদের কাছে সয়াবিন পাঠাতে পারছে না। খবর ব্লুমবার্গ।
পরিবহন সংস্থা আইএম-ইএক্স গ্লোবাল ইনকের লজিস্টিক ডিরেক্টর স্টিভ ক্রানিগ বলেন, কনটেইনার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের যেখানে প্রয়োজন, সেখানে তারা পণ্য পাঠাতে পারছেন না। আমার একেকজন গ্রাহক থাইল্যান্ড থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রতি সপ্তাহে আট থেকে ১০ কনটেইনার চাল সরবরাহ করেন। তবে এ মুহূর্তে সপ্তাহে তারা মাত্র দুই থেকে তিনটি কনটেইনার পাঠাতে পারছেন।
এই কনটেইনার সংকটের জন্য ব্যবসায়ীরা চীনকে দায়ী করেছেন। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করা দেশটি রফতানি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করেছে এবং কনটেইনারগুলোর জন্য বিশাল প্রিমিয়াম প্রদান করছে। এ কারণে পুনরায় পূর্ণ করার চেয়ে খালি কনটেইনার চীনে ফেরত পাঠানো বেশি লাভজনক হয়ে উঠেছে।
এদিকে ক্রমবর্ধমান এ পরিবহন ব্যয় কিছু খাবারের দাম বাড়িয়ে তুলছে। গত মাসে সাদা চিনির দাম তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য গ্রেডের সয়াবিনের চালান বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি এশিয়ার গ্রাহকদের জন্য টফু ও সয়াদুধের ব্যয় বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যদিও পণ্য পরিবহনের পরে খালি কনটেইনারগুলো ফেরত যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে উভয় দিকে পরিবহন থেকে মুনাফার জন্য ফিরে যাওয়ার সময়ও পণ্য পরিবহনের চেষ্টা করা হয়। বিশ্লেষক সংস্থা ফ্রেইটোসের ডাটা অনুযায়ী, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পরিবহনের ব্যয় বিপরীত যাত্রার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি হয়ে গেছে। আর ব্যয় বেশি মানে পরিবহন সংস্থাগুলোর আয়ও বেশি। সুতরাং এ বিষয়টি পূর্ণ না করে খালি কনটেইনারগুলো চীনে ফেরত যাওয়াকে প্ররোচিত করছে।
কনটেইনার পরিবহনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বৃহত্তম লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের নির্বাহী পরিচালক জিন সেরোকা বলেন, এখান থেকে প্রতি চার কনটেইনারের মধ্যে তিনটিই খালি অবস্থায় ফেরত যাচ্ছে। যেখানে অন্যান্য সময় এ হার থাকে ৫০ শতাংশ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি উৎপাদক ভারতের রফতানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় চিনি পরিশোধন সংস্থা শ্রী রেনুকা সুগারস লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট রবি গুপ্ত বলেন, জানুয়ারিতে মাত্র ৭০ হাজার টন চিনি রফতানি হয়েছে। এটি আগের বছর একই সময়ে চেয়ে এক-পঞ্চমাংশেরও কম।
কনটেইনার সংকটের কারণে রোবস্টা কফি বিনের বৃহত্তম উৎপাদক ভিয়েতনামের রফতানিও ব্যাহত হচ্ছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রফতানি ২০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে কিছু ক্রেতা খাদ্যপণ্য কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন এবং সংকটের কারণে অন্যরা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।
আইএম-ইএক্স গ্লোবালের ক্রানিগ বলেন, ডিসেম্বর থেকেই এ সংকট চলছে। আর এটি কেবল খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আপনি সব পণ্যেই ঘাটতির মুখোমুখি হবেন। এজন্য ২০২১-২২ শিপিং মৌসুমে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়ার হার শুনে অবাক হচ্ছি না।
মার্কিন ব্যবসায়ীরা যখন এশিয়ায় সয়াবিন থেকে শুরু করে খাদ্যশস্যের রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই এই কনটেইনার সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক যে কিছু ক্রেতা চুক্তি বাতিল করছেন। আবার অনেক ক্রেতা পরিবহনে উচ্চব্যয় এড়াতে ক্রয়কে বিলম্বিত করছেন।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কর্মী অভাবের বিষয়টি বন্দরগুলোয় ক্রমে গতি কমিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া আর্জেন্টিনায় ধর্মঘটের কারণে এশিয়ায় মার্কিন কৃষিজাত পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। আর এ পরিস্থিতিতে কনটেইনার সংকট বৈশ্বিক খাদ্য বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
সান নিউজ/এসএ