আন্তর্জাতিক

কী ঘটছে মিয়ানমারে, সু চি কোথায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হঠাৎ সেনা অভ্যুত্থানের পর বিশ্বমিডিয়ার দৃষ্টি এখন মিয়ানমারের দিকে। দেশটিতে পরিবর্তি পরিস্থিতিতে কী ঘটছে বা সামনে কী ঘটতে পারে এসব নিয়ে চলছে নানা বিচার বিশ্লেষণ।

১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের রাস্তায় রাস্তায় রাইফেল কাঁধে টহল দিচ্ছে সৈন্যরা আর দেশটির নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী এনএলডি নেতা অং সান সু চিকে নিজ কম্পাউণ্ডে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে ৪৯ বছরের জান্তা শাসনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনা এই অভ্যুত্থান হুট করে কেন হলো সে প্রশ্ন ঘুরছে দেশটির নানা মহলে।

ইয়াঙ্গনে দেশটির প্রধান বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এয়ারপোর্টের ম্যানেজার। মিয়ানমার টাইমস পত্রিকা লিখেছে যে পহেলা জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে এবং বাতিল করা হয়েছে সব ধরনের ফ্লাইট উঠা নামার অনুমতি।

অং সান সু চিসহ এনএলডি নেতাদের আটকে রাখা হলেও বেশিরভাগ স্টেট মিনিস্টারকে মুক্তি দিয়ে বাসায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

সু চির ন্যাশনাল লীগ ফল ডেমোক্রেসি (এনএলডি) গত নভেম্বরের নির্বাচনে বড় ধরনের জয় পেয়েছিলো আর বিব্রতকর পরাজয় হয়েছিলো সেনা সমর্থিত দলের।

ওদিকে এমপিদের যে ডরমিটরিতে আটকে রাখা হয়েছে তার সামনে সেনা প্রহরা বসানো হয়েছে।

একজন এমপি ফোনে এএফপিকে বলেছেন, "আমাদের বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না"।

এর মধ্যেই মঙ্গলবার এনএলডির ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় দেয়া বিবৃতিতে সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ অন্য নেতাদের মুক্তি দাবি করা হয়েছে।

বিবৃতিতে এনএলডি বলেছে, আমরা একে রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি কালো দাগ হিসেবে দেখছি। বিবৃতিতে একই সাথে নভেম্বরের নির্বাচনের ফলকে স্বীকার করে নেয়ার আহবান জানানো হয়।

দলটির একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন দলীয় কর্মকর্তাদের সাথে সু চির এখনো কোনো যোগাযোগ হয়নি।

তবে সু চির একজন প্রতিবেশী তাকে দেখেছেন নিজ বাসার কম্পাউন্ডে।

এনএলডির প্রেস অফিসার কি তো এএফপিকে বলেছেন, তার প্রতিবেশী একজন জানিয়েছেন যে তিনি (সু চি) ভালো আছেন জানাতে কিছু সময় কম্পাউন্ডে হাঁটাহাঁটি করেছেন। তবে সেনা কর্তৃপক্ষের দিক থেকে এখনো এনএলডি নেত্রীর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, যদিও ধারণা করা হচ্ছে যে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহবান জানিয়েছেন এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

তবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের স্থিতিশীলতাকে খাটো না করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

চীন আশা প্রকাশ করেছে যে মিয়ানমারের সব পক্ষ সংবিধান, আইনি কাঠামো ও রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে সব পার্থক্য ঘুচিয়ে উঠবে।

মিয়ানমারে এখন যা হচ্ছে

অভ্যুত্থানের একদিন পর মিয়ানমারের আজকের অবস্থা হলো অনেকটা 'স্বস্তিহীন শান্তি'র মতো।

বড় শহরগুলোতে সৈন্যরা টহল দিচ্ছে এবং রাস্তাঘাটগুলো নিরব হয়ে পড়েছে। তার সাথে আছে রাত্রিকালীন কারফিউ।

ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ আবার চালু হয়েছে আজ মঙ্গলবার সকাল নাগাদ।

যদিও ইয়াঙ্গনে অনেকেই মনে করছেন যে গণতন্ত্রের জন্য তাদের দীর্ঘ লড়াই হেরে গেছে।

আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। যেমন সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকরা অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে বুধবার থেকে কাজ বন্ধের হুমকি দিয়েছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তারা কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন।

ডা. নাইং তু অং বিবিসি বার্মিজকে বলেছেন, এ ধরনের অভ্যুত্থান সহ্য করা যায় না। দেশ ও জনগণকে পরোয়া করে না এমন সামরিক শাসকের অধীনে কাজ করতে পারি না বলে আমি পদত্যাগ করেছি। তাদের প্রতি এটাই আমার সমুচিত জবাব।

হতাশা ও ক্ষোভ

ইয়াঙ্গন থেকে বিবিসি বার্মিজ সার্ভিস জানাচ্ছে যে একদিন আগের সেনা অভ্যুত্থানকে হজম করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে পঞ্চাশ লাখ মানুষের শহর ইয়াঙ্গন।

আজ সকালেও রাস্তাগুলো ছিলো স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটাই নীরব। লিযোগাযোগ ফিরে আসায় আতঙ্কও কিছুটা কমে এসেছে। একদিন বন্ধ থাকার পর বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজধানী নেপিডোতে পার্লামেন্ট ভবনের চারপাশে সৈন্যরা ট্যাংক নিয়ে টহল দিচ্ছে।

এবারের অভ্যুত্থান রক্তপাতহীন হলেও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অর্থনীতির ওপর এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশী বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার ভয় অনেককে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

সু চির বিষয়ে কোনো সরকারি তথ্য নেই

সোমবার ভোরে আটক হওয়ার পর থেকে অং সান সু চি কি অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি আসেনি।

এনএলডির সূত্র গুলো অবশ্য বলছেন তিনি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট দুজনেই গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। আমাদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদিও আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা যদি তাদের ছবি দেখতে পেতাম তাহলেও স্বস্তি বোধ করতাম।

আর আটক এমপিদের রাখা হয়েছে তাদের সরকারি ভবনেই যাকে একজন এমপি আখ্যায়িত করেছেন 'ওপেন এয়ার ডিটেনশন সেন্টার' হিসেবে। অং সান সু চি ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আটক অবস্থায় ছিলেন।

এবার আটকের আগ মূহুর্তে দেয়া বিবৃতিতে তিনি জনগণকে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।

স্থগিত হচ্ছে নামি কিছু কোম্পানির কার্যক্রম

রয়টার্স জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার উডসাইড পেট্রলিয়াম বলেছেন সেনা অভ্যুত্থান ও অং সান সু চির আটকের পর তারা তাদের কিছু কার্যক্রম স্থগিত রাখবে।

জাপানি কোম্পানি সুজুকি বলছে তাদের দুটি কারখানার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। উডসাইড ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

সিঙ্গাপুরের ওভারসিজ চাইনিজ ব্যাংকিং কর্পোরেশন এবং পসকো ইন্টারন্যাশনাল তাদের কার্যালয় বন্ধ করে কর্মীদের বাসা থেকেই অফিস করার নির্দেশ দিয়েছে। বিবিসির সৌজন্যে

সান নিউজ/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মিয়ানমারের দূতসহ ঢাকায় আসছেন মার্কিন ২ কর্মকর্তা

এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় আসছেন মার্কিন প্রশাসন...

জানা গেল ২০২৫ সালের হজ ফ্লাইট শুরুর তারিখ

এবছর পবিত্র হজের প্রথম ফ্লাইট ২৯ এপ্রিল সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবে।...

গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিল বাটা

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ...

পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পিএসসির গেট ভেঙে ভেতরে আন্দোলনকারীরা

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পি...

দিনাজপুরে অংশ নেবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৪১০ পরীক্ষার্থী

দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অ...

রাজনৈতিক বৈরিতা ঢাকা পড়েছে ভাগ-বাটোয়ারার ছায়ায়!

উপরে রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও ভেতরে ভেতরে ‘অ...

ভারতের বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে অভিযোগ জানাবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। এর ফলে বাংলাদেশের র...

চীনা প্রতিষ্ঠানের ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সমঝোতা স্বাক্ষর

এবার বাংলাদেশে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে চীনভিত্তিক খ্যাত...

'পার্ক ব্যবস্থাপনা প্রাণিবান্ধব ও দর্শনার্থীবান্ধব করতে হবে'

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পার্ক ব্যবস্থাপনাটা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা