আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ আগেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিল যেন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনকে জাতীয়করণ করা না হয়। জাতীয়করণ করলে ভ্যাকসিন বিতরণে সুষম বণ্টন থাকবে না বলে সংগঠন দুটি অভিমত দিয়েছিল।
কিন্তু ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়ায়। কয়েক দিন ধরেই ইইউ অভিযোগ করছিল, তাদের ব্লকের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে না ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো। ক্ষোভ প্রকাশ করেই থেমে থাকেনি তারা। সংস্থাগুলির ভ্যাকসিন রফতানি আটকে দিয়েছে ইইউ। এতে ক্ষতির মুখে অন্তত একশোটি দেশ।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার শনিবার (৩১ জানুয়ারি) এ কথা প্রকাশ করেছে। ইইউ-এর ঘোষণা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো তাদের সঙ্গে হওয়া চুক্তি মতো ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে না-পারলে, এই ব্লকের মধ্যে তৈরি হওয়া প্রতিষেধক বাইরে রফতানি করতে দেওয়া হবে না। তাদের কথায়, 'আমাদের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাই সবার আগে। যে প্রতিবন্ধকতার সামনে আমরা পড়েছি, তাতে এই পদক্ষেপ করা ছাড়া আর উপায় ছিল না।'
ইইউ-এর ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপ-প্রধান মারিঅ্যাঞ্জেলা সিমাও বলেন, 'খুবই উদ্বেগের বিষয়।' তাছাড়া সংস্থাটির প্রধান তেদরস অ্যাডানম গ্যাব্রিয়েসাস আগেই বলেছিলেন, 'ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয়তাবাদ শুরু হলে এই পৃথিবীর সেরে ওঠা খুব কঠিন হবে।'
ভ্যাকসিনের সমবণ্টন নিয়ে বারবারই জোর দিয়ে আসছে জাতিসংঘ ও তার অন্তর্ভুক্ত সংস্থাগুলি। তাদের বক্তব্য, 'প্রতিষেধক সরবরাহ নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখা না হলে মহামারিকে অতিক্রম করা যাবে না। বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা এ ভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে। নৈতিক ব্যর্থতা তো রয়েছে।'
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা। সুইডেন ইইউ-এর অন্তর্ভুক্ত দেশ। অন্যদিকে, ফাইজার-বায়োএনটেক জুটির মধ্যে বায়োএনটেক জার্মান সংস্থা। তারাও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ। তা ছাড়া, বেলজিয়ামে তৈরি হচ্ছে প্রতিষেধকটি। সেখান থেকেই ব্রিটেনে পাঠানো হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়ে বিবাদ মূলত অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে।
ইইউ-এর কারণে ব্রিটেন, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া-সহ অন্তত একশোটি দেশ বিপাকে পড়বে। এর মধ্যে বেশ কিছু দরিদ্র দেশও রয়েছে। ইইউ-এর দাবি, এটি একটি সাময়িক পদক্ষেপ। রফতানিতে কোনও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে না। কিন্তু সাময়িক হলেও, নতুন নিয়মে ইইউ-এর বাইরে ভ্যাকসিন পাঠাতে হলে, ব্লকের অনুমতি নিয়েই প্রতিষেধক পাঠাতে পারবে সংস্থাগুলি।
সান নিউজ/এসএস