আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই প্রথমবারের মতো বিদেশি নাগরিকদের নাগরিকত্ব প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। যারা উপসাগরীয় অঞ্চলের মান উন্নয়নে কাজ করবে তাদের এ নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলছে দেশটি।
দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের নেতা শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বলেছেন, নাগরিকত্ব প্রদানে যোগ্য বলে বিবেচিতদের মধ্যে বিনিয়োগকারী, মেধাবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং শিল্পীরা অন্তর্ভুক্ত হবেন। তারা এবং তাদের পরিবার দ্বৈত জাতীয়তা রাখতে পারবে বলে, তিনি জানান।
বিবিসির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোন নিম্ন-আয়ের শ্রমিকদের এই কঠোর মানদণ্ড পূরণের সম্ভাবনা কম। শেখ মোহাম্মদ জানান, তাদের লক্ষ্য হল সেইসব মানুষকে আকর্ষণ করা যারা তার দেশের উন্নয়নের যাত্রায় অবদান রাখতে পারবে। এক্ষেত্রে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার নিয়ম নেই, বরং সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজ পরিবার বা কর্মকর্তারাই মনোনীত করবেন যে তারা কাদের নাগরিকত্ব দেবেন।
তিনি বলেন, তারপর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবেন যে, এই মনোনীত ব্যক্তিদের নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়া হবে কি না। করোনা মহামারি এবং তেলের দাম পড়ে যাওয়ার মধ্যে দেশটির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা এলো। সম্প্রতি কয়েক হাজার বিদেশিকে দেশটি ছেড়ে চলে যায়।
আবুধাবি ভিত্তিক পত্রিকা দ্যা ন্যাশনাল বলেছে, নতুন ব্যবস্থার আওতায় বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দেয়া হবে যেন তারা দেশটির গভীর ভিত গড়তে পারে।
আর্থিক ও পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে উপসাগরীয় রাজ্যের এই উত্থান পুরোটাই নির্ভর করে প্রবাসীদের ওপর। বিবিসির আরব বিষয়ক সম্পাদক সেবাস্তিয়ান উশার বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই প্রবাসীরাই সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা যাদের ৯০% এর বেশি কর্মক্ষেত্রে যুক্ত। বিদেশি কর্মীদের সাধারণত নবায়নযোগ্য ভিসা দেয়া হয় যা বেশ কয়েক বছরের জন্য বৈধ থাকে এবং সেই ভিসা মূলত চাকরির সাথে যুক্ত থাকে।
স্বল্প আয়ের শ্রমিকরা দেশটির অর্থনীতি গড়ে তুলতে, নির্মাণ ক্ষেত্রে, হোটেল ব্যবসা এবং ভ্রমণ খাতে জনবল সরবরাহে মূল ভূমিকা রেখেছে। এই শ্রমিকরা তাদের উপার্জনের বড় অংশ প্রায়শই নিজ দেশে থাকা পরিবারকে পাঠিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে অনেকে দেশটিতে কয়েক বছর থাকলেও তাদের নাগরিকত্ব বা স্থায়ীভাবে বসবাসের কোনও আনুষ্ঠানিক সুযোগ দেয়া হয়নি এবং তাদের জন্য কল্যাণমূলক কোন সুবিধা দেয়ারও ব্যবস্থা নেই।
স্বল্প-আয়ের শ্রমিকদের যেখানে অবহেলিত রাখা হয়েছে সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিনিয়োগকারী, শিক্ষার্থী এবং পেশাদার কর্মীসহ নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরির মানুষদের জন্য দীর্ঘ সময় থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে। ২০১৯ সালে শেখ মোহাম্মদ একটি গোল্ডেন কার্ড ভিসা পদ্ধতি চালু করেছিলেন যার আওতায় চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, এবং স্কুলে বেশ ভালো ফল করা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাদারদের পরিবারসহ ১০ বছর থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। গত বছর আরও বেশি সংখ্যক লোকদের এই সুযোগ দেয়া হয়।
ওয়াম নিউজ এজেন্সি প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, নতুন নাগরিকত্ব প্রকল্পের আওতায় বিনিয়োগকারীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পত্তির মালিক হতে হবে, চিকিৎসকদের এমন কোন একটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে হবে যার অনেক চাহিদা রয়েছে, উদ্ভাবকদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে থেকে অনুমোদিত পেটেন্ট গ্রহণ করতে হবে এবং সৃজনশীল ব্যক্তিদের তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় থাকতে হবে।
নতুন পাসপোর্টধারীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই জনকল্যাণ ব্যবস্থার আওতায় যোগ্য বিবেচিত হবে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। দেশটি তাদের আনুমানিক ১৪ লাখ নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ঋণ এবং অনুদানের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে।
নাগরিকত্ব সাধারণত উপসাগরীয় দেশগুলোর বাসিন্দাদের দেওয়া হয় না। এটি কেবলমাত্র আমিরাতি পুরুষদের স্ত্রী এবং আমিরাতি বাবার সন্তানদের দেওয়া হয়। বিদেশিদের বিয়ে করা আমিরাতি মায়ের সন্তানরা নাগরিকত্ব পায় না তবে পরিবর্তে তাদের আবেদন করতে হয়, এই প্রক্রিয়ায় কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
সান নিউজ/এসএ