ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত হজ। ইসলামি বর্ষপঞ্জির হিসেবে এই জমায়েত জুলাই মাসের শেষের দিকে হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সৌদি সরকার এখনই কাউকে চুক্তি না করার আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি কর্মকর্তাদের দেওয়া ইঙ্গিত পর্যালোচনা করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলছে, এ বছরের হজ বাতিল হতে পারে।
বুধবার (১ এপ্রিল) এক টেলিভিশন ভাষণে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বেনতেন বলেছেন, ‘সৌদি আরব সব মুসলমান ও নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত। সে কারণে পরিস্থিতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত হজের বিষয়ে কোনও চুক্তির বিষয়ে বিরত থাকতে আমরা সব দেশের মুসলিম ভাইদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে গত মাসের শুরুর দিকে ওমরাহ স্থগিত করা হয়। অভূতপূর্ব এই পদক্ষেপের সময়েই এ বছরের হজ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারির পর এবার প্রথমবারের মতো বন্ধ করে দেওয়া হয় মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনা।
গত দুইশ’ বছরের মধ্যে কখনোই বার্ষিক হজ বাতিল করা হয়নি। এমনকি ১৯১৮ সালের মহামারি ফ্লুতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর পরও এমন পদক্ষেপ নেয়নি সৌদি। তবে এবার করোনা জনিত সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও কয়েক মাস সময় লাগলে বন্ধ থাকতে পারে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা।
সর্বশেষ ১৭৯৮ সালে বাতিল হয়েছিল হজের আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে মহামারি ও যুদ্ধের কারণে আরও প্রায় ৪০ বার এই বার্ষিক জমায়েত বাতিল হয়েছে। লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজের লেকচারার সিরাজ মাহের গার্ডিয়ানকে বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছে যে এবারের হজ বাতিল হতে পারে।
সিরাজ মাহের বলেন, ‘তারা অতীতের ঐতিহাসিক উদাহরণ উল্লেখ করছে যেখানে বিপর্যয় বা সংঘাতসহ বিভিন্ন কারণে হজ বাতিল করা হয়েছিল। আমার মনে হয় এটি সেই বৃহত্তর প্রচেষ্টা যাতে মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে, হজ যদি বাতিল করা হয়েই থাকে তাহলে তা একেবারেই কোনও অভূতপূর্ব ঘটনা নয়’।
সিরাজ মাহের জানান, ইসলামে কেয়ামতের ইঙ্গিতের যে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে হজ বাতিল হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলছেন করোনাভাইরাসের কারণে হজ বাতিল হলে তা কেয়ামত নিকটে আসার ইঙ্গিত বহন করবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, তা যথাযথ নয়। কারণ কেয়ামতের ইঙ্গিত দিতে গিয়ে হজের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে, মহামারীর কারণে হজ বাতিল তো আলাদা ব্যাপার।
উল্লেখ্য, বিশ্বে করোনাভাইরাসে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রায় ৪৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ৯ লাখ মানুষ। আর সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ১৭শ'র বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৬ জন।