আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরান এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তায় পড়ছে ইসরায়েল। ক্ষমতাগ্রহণের ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি পুনর্বহাল এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পৃথক রাষ্ট্র গঠনে উদ্যোগী হচ্ছে। এ নিয়েই শঙ্কায় পড়েছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
অবশ্য একদিক থেকে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে ইসরায়েল। ট্রাম্পের আমলে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এবং শহরটিতে মার্কিন দূতাবাস রাখার সিদ্ধান্ত আপাতত পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম বছরেই ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইসরায়েলকে ওই স্বীকৃতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তিনিই তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইরান ইস্যুতে দুশ্চিন্তা : ইসরায়েলি দৈনিক পত্রিকা ওয়ালা বৃহস্পতিবার লিখেছে, টানা চার বছর ট্রাম্পের হাতে নষ্ট হওয়া ইসরায়েল সরকারের কর্মকর্তারা বর্তমানে ‘মাদকাসক্তি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার লক্ষণ’ দেখাচ্ছেন।
পত্রিকাটি বলছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আতঙ্ক বোধগম্য এবং এটি মোটেও আশ্চর্যজনক নয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নতুন প্রশাসন এই আশঙ্কাকে কিছুটা প্রশমিত করার চেষ্টা করছে। তবে সেটা সফল হবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
ওয়ালার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘(মার্কিন) কংগ্রেসের এক শুনানিতে মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইরানি ফাইলের বিষয়ে শুধু রিপাবলিকানদেরই নয়, বরং ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোকেও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন; যারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাইডেনকে ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে না ফিরতে এবং তাদের সঙ্গে আগাম পরামর্শ করতে অনুরোধ জানাচ্ছিল।
ইসরায়েলি পত্রিকাটি জানিয়েছে, ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্টের মিত্রদের এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে, পরমাণু চুক্তিতে ফেরা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং সেটি হলে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই হবে।
দৈনিক ওয়ালার তথ্যমতে, বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়েও চিন্তায় পড়েছেন নেতানিয়াহু। যেমন- ইরানে বিশেষ দূত হতে চলা রবার্ট ম্যালে, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শারম্যান, সিআইএ’র সম্ভাব্য পরিচালক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান প্রমুখ।
এসব কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ভূমিকা রেখেছিলেন। সেসময় ওই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছিল ইসরায়েল এবং উপসাগরীয় কয়েকটি দেশ। ২০১৮ সালে সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটিকে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি আলোচনা : ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনার বিষয়ে সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট স্থানীয় পত্রিকা মারিভকে বলেছেন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধান এবং জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতির বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানাচ্ছেন তিনি।
ওলমার্টের কথায়, এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তিনি (বাইডেন) ইসরায়েলের বন্ধু। যারা ইসরায়েলের বন্ধু নন, তারাই শুধু রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন রয়েছে তাতে সমর্থন করতে পারেন।
ইসরায়েলের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানই ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের সমাপ্তি টানার একমাত্র উপায়।
ইসরায়েলের ডানপন্থী দলগুলো অবশ্য ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতা দেয়ার ঘোর বিরোধী এবং তারা দখল করা পশ্চিম তীরের এক-তৃতীয়াংশ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের দিকে প্রবলভাবে পক্ষপাতিত্ব করেছে। ট্রাম্পের শাসনামলে দখল করা পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন চারগুণ বাড়িয়েছে ইসরায়েলিরা। দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ছাড়াই আরব দেশগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনেও ঠেলে দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তবে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষে দায়িত্বভার গ্রহণ করা নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস-প্রেসিডেন্টকে ভিডিওবার্তা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের মতো বাইডেনের সঙ্গেও কাজ করতে মুখিয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।
সান নিউজ/এসএম