আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০১৮ সাল থেকেই স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং চীনা পণ্যে আধিপত্য রুখতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আর বাড়তি শুল্কারোপ করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। পরবর্তীতে চীনও পাল্টা শুল্ক বসাতে থাকে মার্কিন পণ্যের আমদানিতে। দুই দেশের এমন পাল্টাপাল্টি লড়াই রূপ নেয় বাণিজ্য যুদ্ধে। মার্কিন বাজারে তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবসা হারাতে থাকে চীনা কোম্পানিগুলো।
শিল্প পণ্য ও কাঁচামালে শুল্কের এ লড়াই ট্রাম্পের গরম মেজাজে দিন দিন ছড়িয়ে যায় প্রযুক্তি পণ্য ও সেবাতেও। সবশেষ গেল সপ্তাহে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে চীনের ৮টি অ্যাপে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করেন। অ্যাপগুলো হলো-আলী পে, ক্যামস্ক্যানার, কিউকিউ ওয়ালেট, শেয়ারইট, টেনসেন্ট কিউ কিউ, ভিমেইট, উইচ্যাট পে এবং ডব্লিউপিএস।
ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বিদায় নেওয়ার কয়েকদিন আগেও এমন কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় চটেছে চীন সরকার। একের পর এক ব্যবসা সংকুচিত হওয়ায় যখন নাস্তানাবুদ চীনা বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীরা। ঠিক তখনই পাল্টা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে চীন সরকার।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আরটি’তে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশকিছু নীতিমালার তালিকা প্রকাশ করেছে। যা মূলত চীনা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের জারি করা আইনি প্রতিবন্ধকতা ও নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় কাজে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ তালিকাকে বলা হচ্ছে ‘রুলস অন কাউন্টারঅ্যাকটিং আনজাস্টিফাইড এক্সট্রাটেরিটোরিয়াল অ্যাপ্লিকেশন অব ফরেন লেজিসলেশান অ্যান্ড আদার মেজারস’ যেখানে বলা হয়েছে বিধিগুলো তখনই ব্যবহার হবে যখন বিদেশি/ বাহ্যিক কোনো নীতিমালা তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে চীনা নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যকি কর্মকান্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন বাজারে চীনা পণ্যের আমদানিকারকদের কোনো হস্তক্ষেপ না থাকলেও ট্রাম্প প্রশাসন বাড়তি শুল্পারোপ করে চীনা পণ্যের প্রবেশে বাধা তৈরি করেছে। শনিবার (০৯ জানুয়ারি) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নতুন এ বিধিমালা তুলে ধরা হয়েছে। যা খুব শিগগিরই কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে।
কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রকম নিয়ম লঙ্ঘনের শিকার হলে ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিধিমালায়। এ বিষয়ে গঠিত বিশেষ তদন্ত কমিটি যদি আরও জানতে পারে যে বিদেশি বিধিনিষেধ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বা জাতীয় সুরক্ষার পরিপন্থী, তাহলে তারা ‘গৃহীত, কার্যকর বা পালন করার পরিবর্তে’ প্রাসঙ্গিক বিদেশি আইনের বিরুদ্ধে একটি ‘নিষেধাজ্ঞার আদেশ’ জারি করতে পারবে।
চীন সরকার বিদেশি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা নিতে পারবে উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া ফিরিয়ে দেওয়া হবে। একইসাথে বিদেশি বিধিনিষেধে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে চীন সরকার প্রয়োজনীয় সব রকম সহায়তা করবে বলেও জানানো হয়।
পৃথক আরেকটি বিবৃতিতে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈদেশিক নিষেধাজ্ঞার অপব্যবহারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চরম ক্ষতি হয়েছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে পথে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিবৃতিতে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলা না হলেও চীন সরকার এমন উদ্যোগ নিল যখন বিশ্ব অর্থনীতির দুই পরাশক্তি একে অপরের মুখোমুখি। আর সবশেষ চলতিবছরের শুরুতে সেনাবাহিনীর বিনিয়োগ আছে এমন অভিযোগে চীনের তিনটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (এনওয়াইএসই)।
তিনটি কোম্পানি হচ্ছে- চায়না মোবাইল লিমিটেড, চায়না টেলিকম লিমিটেড এবং চায়না ইউনিকম হংকং লিমিটেড। আর গেল বৃহস্পতিবার, আটটি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পারদ নেমেছে তলানিতে।
এর আগে মার্কিন প্রশাসন দেশটির দুটি বড় শেয়ারবাজার এনওয়াইএসই এবং নাসডাক-এর কাছে চীনা কোম্পানিগুলোর তালিকা সংগ্রহ করে। নেওয়া হয় চীনা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের একটি ডাটাবেজ। এতে দেখা যায় অন্তত ২শ’টি চায়না কোম্পানি মার্কিন এ দুই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। যার বাজার মূলধন বর্তমানে ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, চিনের করা নতুন বাণিজ্যিক বিধিমালার বিষয়ে এক সাক্ষাতকারে দেশটির রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হ্যান লিউ বলেন, এটার কিছু কিছু ধারা দ্বিতীয় পর্যায়ের ( গৌণ) নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কাজ করবে। এবং এধরনের পদক্ষেপ কেবল চীন একাই হাতে নিয়েছে তা নয়। তারমতে, একইরকম বিধিমালা আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জিন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশে।
সান নিউজ/এম