ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
করোনায় লণ্ডভণ্ড বিশ্ব ব্যবস্থা। একা হয়ে পড়েছে প্রতিটি রাষ্ট্র। মানুষ ঘরবন্দী, দেশে দেশে চলছে লকডাউন। কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষেরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে। সংসার কিভাবে চলবে তা নিয়ে ভাববার কোন জায়গা নেই। ঘোরতর এক অমানিশায় আত্মাহুতিই যেন শেষ কথা। এমন কিছু যে কোথাও কোথাও ঘটতে পারে, তা অনেকের ভাবনাতেই কাজ করছিল। তাদের সে ধারণাই সত্যি হওয়া শুরু করল। ভারত জুড়ে লকডাউনে বেকার হয়ে পড়েছে অসংখ্য শ্রমিক। তাদেরই দুজন আত্মহত্যা করলেন, সংসারের কথা চিন্তা করে।
ভারতের সঞ্চার নিগম লিমিটেডের (বিএসএনএল) চুক্তিভিত্তিক দুই কর্মী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন কর্মহীন হয়ে সামনে দিনগুলোতে সংসার না চালাতে পারার ভয়াবহতায়। এ খবর দিয়েছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।
পত্রিকাটি বলছে, লকডাউনের সময় সংসার কীভাবে চলবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন ওই দুই ব্যক্তি। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তারা। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সংগঠন কনট্রাক্টরস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন অব বিএসএনএলের এক নেতা বলেন, ‘অনটন এবং এই লকডাউনের সময় অনিশ্চয়তার জেরেই আত্মহত্যা করেছেন ওই দুই যুবক।’
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মঙ্গলবার নৈহাটির গরিফায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন সুজয় ঘোষ (৪৪)। তিনি কাজ করতেন সন্তোষপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ।
সুজয়ের আত্মীয় বিএসএনএলের ঠিকা কর্মী অপূর্ব ঘোষ জানান, ‘গত প্রায় এক বছর ধরে সুজয়সহ আমরা সবাই অন্যদের মতোই রোজ অফিসে যাচ্ছিলাম। সুজয়ের দুই সন্তানের একজন প্রথম শ্রেণীতে ও অন্যজন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন তার বৃদ্ধা মা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। এমনিতেই অনেক দিন ধরে বেতন পাচ্ছিলেন না। তার ওপর লকডাউন ঘোষণার পর সংসার চলবে কীভাবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন অধিক। এসব কারণেই সুজয় আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি অপূর্বের।
অন্য আরেক জন যিনি আত্মহত্যা করেছেন তিনি অনুকূল রায় (৪২), বারাসত হৃদয়পুরের বাসিন্দা অনুকূল। বুধবার আত্মহত্যা করা অনুকূলও প্রায় এক বছর ধরে বেতন পাচ্ছিলেন না।
বিএসএনএলের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সংগঠনের নেতা অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রায় ৫ হাজার মানুষ বেতন পাচ্ছেন না অনেক মাস ধরে। এরা সবাই প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলে আসছে। খুব শিগগির একটা সুরাহা হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই করোনা আতঙ্ক এবং লকডাউনে অসময়ে অনেককে শেষ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।