আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাপানের একটি বেসরকারি সংস্থা এবং কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে বিশ্বের প্রথম কাঠের স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সুমিতোমো ফরেস্ট্রি নামে ওই বেসরকারি সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা গাছের বৃদ্ধি এবং মহাকাশে কাঠের উপকরণ ব্যবহারের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পৃথিবী গ্রহের চরম পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের কাঠ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
মহাকাশে এরই মধ্যে বিপুল পরিমানে আবর্জনা জমে গেছে, যেটিকে বলা হয় স্পেস জাঙ্ক। অপরদিকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণও থেমে নেই। ফলে এই স্পেস জাঙ্ক বড় সমস্যা হয়ে উঠছে। কাঠ দিয়ে স্যাটেলাইট তৈরি সম্ভব হলে স্পেস জাঙ্ক অনেকখানি হ্রাস করা সম্ভব হবে। কারণ একটি স্যাটেলাইট পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
এছাড়া এটি বায়ুমণ্ডলে কোনও আবর্জনার অবশেষে রাখবে না। কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জাপানি নভোচারী তাকাও দোই বলেন, আমরা সত্যিই খুব উদ্বিগ্ন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় স্যাটেলাইটগুলো যখন বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষে জ্বলে ওঠে তখন ক্ষুদ্র অ্যালুমিনা কণা তৈরি হয়।
এই কণাগুলো বহু বছর বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে ভাসতে থাকে। অবশেষে এটি পৃথিবীর পরিবেশকে প্রভাবিত করে। কাঠের স্যাটেলাইটের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের পরবর্তী পর্যায়ের কাজ হবে স্যাটেলাইটের ইঞ্জিনিয়ারিং মডেল তৈরি, এরপরে আমরা ফ্লাইট মডেল তৈরি করবো।
অধ্যাপক দোই নভোচারী হিসেবে ২০০৮ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) গিয়েছিলেন। এই মিশনের সময় তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মহাশূন্যে একটি বুমেরাং নিক্ষেপ করেন যা মূলত মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
প্রায় ৪০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত সুমিতোমো গ্রুপের অংশ সুমিতোমো ফরেস্ট্রি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কাঠ দিয়ে এমন একটি বস্তু তৈরির চেষ্টা করছেন যা তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং সূর্যের তীব্র আলোতে অক্ষত থাকতে পারবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) হিসাবে, পৃথিবীকে প্রায় ৬ হাজার উপগ্রহ প্রদক্ষিণ করছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ অকেজো অর্থাৎ স্পেস জাঙ্ক। গবেষণা সংস্থা ইউরোকনসাল্ট জানায়, এই দশকে প্রতি বছর ৯৯০টি করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। এর মানে ২০২৮ সালের মধ্যে কক্ষপথে থাকবে ১৫ হাজার স্যাটেলাইট। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স এরই মধ্যে ৯০০টিরও বেশি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। আরো কয়েক হাজার উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা আছে এ কোম্পানির।
মহাকাশের আবর্জনার টুকরাগুলো অবিশ্বাস্য গতিতে ভ্রমণ করে। এগুলোর গতি ঘণ্টায় ২২ হাজার ৩০০ মাইল। ফলে কোনো কিছুর সঙ্গে এগুলোর সংঘর্ষ হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ২০০৬ সালে স্পেস জাঙ্কের একটি ছোট্ট টুকরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আছড়ে পড়েছিল। এতে স্টেশনের জানালা থেকে একটি চিপ উড়ে যায়। সূত্র: বিবিসি।
সাননিউজ/এসএ