আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের অর্থনৈতিক বেহালদশা বিগত দুই বছর যাবত চলমান থাকলেও চলতি বছর করোনা মহামারির আঘাতে দেশটির মন্দা পরিস্থিতি আরও শোচনীয় রূপ ধারণ করে। এরপর ৯ মাসের মধ্যে ভাইরাসের দ্বিতীয় ঝড়ের মুখে পড়ে তুরস্ক। বর্তমানেদেখা যাচ্ছে দেশটির উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা ঋণের মাঝে ডুবে গেছে এবং ক্ষুধার্ত লোকের সংখ্যাও ক্রমে বাড়ছে।
মেট্রোপোল নামে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে ২৫ শতাংশ বলেছেন, তারা নিজেদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারছেন না। এ জরিপের সত্যতার ব্যাপারে নিঃসন্দেহ আকবাসও। তিনি বলেন, এখন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষোভে ফেটে পড়ার অপেক্ষা।
চলতি বছরে দেশের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান আগ্রাসী বিদেশনীতি ও সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে বেশ আলোচনায় থাকলেও করোনা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনও সফলতা দেখাতে পারেননি। যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। নভেম্বরে এসে প্রথমবারের মতো সরকার স্বীকার করে যে উপসর্গহীন রোগীদের গণনার বাইরে রাখার কারণে দেশের মোট সংক্রমণ সংখ্যা কম দেখা গেছে। এরপর নতুন পরিসংখ্যানে তুরস্কে রেকর্ড সংক্রমণের বিষয়টি সামনে আসে।
চলতি বছর তুর্কি মুদ্রা লিরা রেকর্ড অবমূল্যায়ন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ডলারের বিপরীতে আরও ৩০ শতাংশ নিচে নেমে এসেছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাজেভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই সংকট যখন সামনে এসেছে, তখন এরদোগান তার সবচেয়ে নিকটতম ও শক্তিশালী সহযোগী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে যাচ্ছেন।
যিনি সামনের মাসেই হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাবেন। তুরস্ক এরই মধ্যে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দ্বারা নিষেধাজ্ঞায় আছে সাইপ্রাসের দাবি করা পানিতে গ্যাস ড্রিলিং করার কারণে। সব মিলিয়ে এরদোগানের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ায়।
এমনকি বাইডেনকে অভিনন্দন জানানোর ক্ষেত্রেও কিছুটা দায়সারা মনোভাব দেখিয়েছেন এরদোগান। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসন মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের পতনের কারণে এরদোগানের ওপর কড়া অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে এসে সংকটের মুখে অবশ্য কিছুটা সুর নরম করেছেন এরদোগান। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থনৈতিক ও বিচারিক সংস্কারের।
এমনকি রাজনৈতিকভাবে আটক করা বন্দিদের মুক্তির সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। যাকে অনেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশল হিসেবে দেখছে। এদিকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এরদোগান ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন তিন মাসের সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দেন।
সমালোচকদের মতে, এরদোগানের এই কৌশল সংকটের মাত্রার তুলনায় খুবই সামান্য। অবশ্য তিনি উদ্যোগ গ্রহণেও বেশ দেরি করে ফেলেছেন। সাম্প্রতিক জরিপগুলো বলছে এরদোগান এবং তার দলের জনপ্রিয়তা ক্রমে নিচের দিকে নামছে, যাকে এরই মধ্যে তার আধিপত্যবাদী রাজত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে।
সান নিউজ/এসএ